Advertisement
Advertisement

Breaking News

পুজোর থিম সংগীতে প্রথমবার কবীর সুমন

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আমার নাম কবীর সুমন, ভুলে যাননি বোধহয়, আগে কাজ, পরে ছবি হবে।’ আগত চিত্র সাংবাদিকদের উদ্যত ক্যামেরাগুলো ঝটপট নেমে যেতেই, ফিক করে হাসি। হাত তুলে বললেন, ‘কাজটা হয়ে যাক আগে, ছবি হবে’। এর মধ্যেই কে যেন খবর দিয়েছেন, মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। আবার হেসে উঠলেন তিনি। নির্মল হাসি। ওদিকে পেন […]

Kabir Suman at his best, recorded theme song for kolkata pujo
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 19, 2016 3:30 pm
  • Updated:September 19, 2016 9:33 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘আমার নাম কবীর সুমন, ভুলে যাননি বোধহয়, আগে কাজ, পরে ছবি হবে।’ আগত চিত্র সাংবাদিকদের উদ্যত ক্যামেরাগুলো ঝটপট নেমে যেতেই, ফিক করে হাসি। হাত তুলে বললেন, ‘কাজটা হয়ে যাক আগে, ছবি হবে’। এর মধ্যেই কে যেন খবর দিয়েছেন, মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন। আবার হেসে উঠলেন তিনি। নির্মল হাসি। ওদিকে পেন ড্রাইভে করে আনা ট্র্যাক ততক্ষণে বাজতে শুরু করেছে। ‘আগে সব কিবোর্ড এনে বাজাতাম, এখন কত পাল্টে গিয়েছে, প্রযুক্তি জিন্দাবাদ’- বলে উঠলেন তিনি। ২ আশ্বিন, ১৪২৩। ঝকঝক করছে একখানা শরতের সকাল। সদ্য শেষ হয়েছে বিশ্বকর্মা পুজো। গাছে গাছে এখনও আটকে আছে ভোকাট্টা ঘুড়ি। শহর জুড়ে পুজো পুজো আমেজের ভিতরই রেকর্ডিং স্টুডিওতে এমন মেজাজে পাওয়া গেল কবীর সুমনকে। স্টুডিও ভাসছে তাঁর সুরে। কখনও কখনও একটু গুণগুণ করে গেয়ে উঠছেন- কাঁধে বাঁক ব্যাঁকার উপায় নেই, ইতিহাস দুই পাশে ঝুলছেই। না, নতুন কোনও পুজোর অ্যালবাম নয়। তবে পুজোয় সুমনের এ গান উপহার দেবে এসবি পার্ক সর্বজনীন। তাদের পুজোয় জন্যই প্রথমবার এরকম পুজোয় থিম সং তৈরি করেছেন কবীর সুমন।

পাড়ার পুজোর জন্য আগে অবশ্য গান বানিয়েছিলেন একবার। সেবার পাড়ার লোকের অনুরোধে পুজোর থিমটাও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এটা সেরকম কাজ নয়। বেশ দুরুদুরু বুকেই তাঁর কাছে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন থিমশিল্পী ভবতোষ সুতার। বললেন, “যখনই কাজটা শুরু করেছি, স্কেচিং চলছে, তখনই মনে হয়েছে এই ভাবনাটার উপর কেউ যদি গান লিখতে পারেন তিনি কবীর সুমন। কখনও ভাবিনি যে এরকম একটা প্রস্তাব নিয়ে যাব। তবে পুরোটা শোনার পর উনি নিজে থেকেই কাজ করতে চাইলেন। তবে একটা শর্তে, কাজের জন্য কোনও পয়সা নেবেন না।”

Advertisement

কবীর সুমন নিজেও জানালেন, ভবতোষের ভাবনা তাঁর কাছে একটা নতুন ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে এসেছিল। কী সেই ভাবনা?suman-2_web এবার পুজোয় ভবতোষের থিম-বাঁক। যে বাঁক আসলে একটি মেরুদণ্ড। “ছোটবেলায় বাবা বলতেন মেরুদণ্ড সোজা রাখবি। যত বড় হয়েছি তত কথাটার অর্থ পরিষ্কার হয়েছে। নিজের জন্যও তো বটে সমাজের জন্যও এই মেরুদণ্ড সোজা রাখা বড় দরকার। এই মেরুদণ্ডকে আমি তুলে এনেছি সমাজের প্রেক্ষিতে। এই যে সভ্যতা তার মেরুদণ্ড যাঁরা, তাঁদের কথা তো ইতিহাসে লেখা থাকে না। অথচ সেই সব দধিচিদের হাড়েই চলছে সভ্যতার বাষ্পশকট। আমার থিমে তাই থাকবে রথ। এই বাঁক আসলে সভ্যতার বোঝা যাঁরা বয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁদেরকে রেকগনাইজ করার একটা প্রয়াস।”

যিনি নিজে গানে বলেন ‘তোমাকে ভাবাবোই ভাবাব’, তাঁকেও ভাবিয়ে তুলেছিল ভবতোষের এ থিম।  ‘এই যে সভ্যতার বাঁক, তা কে বয়? বিড়লাও বয় না, রবীন্দ্রনাথও না, আমিও না। সে বোঝা বয়ে চলেন সাধারণ মানুষ। এমন একটা সময় ও এই কাজটা করছে, যখন কর্পোরেট ক্যাপিটালিজম, ফিনান্স ক্যাপিটালিজম মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সাঁওতালদের বঞ্চিত করে মাইন হচ্ছে, সে কি সাঁওতালদের জন্য! এখনও দেশের শতকরা অন্তত আশিভাগ লোকের হাতে প্রতিদিন খরচ করার মতো কুড়িটা টাকাও থাকে না। এমন একটা সময়ে ভবতোষের এই আইডিয়াই আমাকে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল। আমার সংগীতের ইতিহাসকেও চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছিল।,’ জানালেন সুমন। আর সেই চ্যালেঞ্জই তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে, ‘মেহনত পরের ওজন বয়, যেখানে মানুষ শ্রমিক হয়/ দু’টি পা চলছে তো চলছেই, কাঁধে বাঁক ব্যাঁকার উপায় নেই’ ।

suman-3_webস্রেফ চলতি থিম সং হিসেবে এটিকে ভাবতে নারাজ ভবতোষ। ‘এটা যে আস্ত একটা গান, শুধু পুজোর থিম সং নয় তা যে কেউ শুনলেই বুঝবেন। আর আমার কাজে এই কথাগুলো যে কীভাবে কমপ্লিমেন্ট করেছে সে আমিই জানি। সবটা মিলিয়েই পুরো কাজ। এই ১৭ বছর পুজো করছি, আমার কাজের সঙ্গে যে কবীর সুমনের নাম জড়াল, তাঁর সঙ্গে আমিও কাজ করলাম, এটা আমার কাছে অ্যাসেট।,” বললেন ভবতোষ।

কলকাতা পুজোর সঙ্গে এত তৃণমূল নেতার নাম জড়িয়ে আছে। কই কেউ তো এতদিন তাঁকে থিম সং করতে ডাকলেন না?  “কেউ বোধহয় ভাবেননি। খেয়াল করবেন, আমাদের মধ্যে একটা পারস্পরিক সম্মানের দূরত্ব আছে। ভবতোষ নিজে একজন বড় শিল্পী। সেই জায়গা থেকেও ও বুঝেছে যে এই কাজটা আমাকে দিয়ে হবে।”, বললেন সুমন। তবে কি এবার এসবি পার্কের পুজোর বাঁকে একদিকে কবীর সুমন, অন্যদিকে ভবতোষ সুতার? সুমন বলছেন, ‘না না ভবতোষই সব’। আর শুনে হাসছেন ভবতোষ। হাসছেন উদ্যোক্তারাও। “এতদিন তো থিম মানে নানারকম প্যান্ডেল দেখে এসেছেন মানুষ, আমরা প্যান্ডেল করছি না। এমন একটা কাজ হচ্ছে, যা দেখে মানুষ ভাবতে বাধ্য হবেই”, বলতে বলতে রোদ্দুরের মতোই ঝকঝকে হাসি খেলে গেল উদ্যোক্তার মুখে।

শুনে নিন সেই গান-

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement