অর্ণব আইচ: রেশন বন্টন দুর্নীতির তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে উদ্ধার হওয়া ‘মেরুন ডায়েরি’ ঘিরে রহস্য। এই ডায়েরিতে দুর্নীতিতে ইডির হাতে গ্রেপ্তার বাকিবুর রহমানের সঙ্গে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি ইডির। যদিও রাজ্যের দুই মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও শশী পাঁজা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ একযোগে জানিয়েছেন, ইডির এই সমস্ত দাবিই ভিত্তিহীন।
ইডির সূত্র জানিয়েছে, হাওড়ার ব্যাঁটরায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ অভিজিৎ দাসের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হওয়া মেরুন রঙের ডায়েরিতে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেনের হিসাব রয়েছে। এখানেই ‘এমআইসি’ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম রয়েছে। যাঁরা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেছেন, ওই মেরুন ডায়েরিতে রয়েছে তাঁদের নামের তালিকা। কীভাবে বাকিবুর বিপুল টাকা সরিয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে ডায়েরিতে। ইডির দাবি, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, তাঁর স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার এক বছরের মধ্যেই কীভাবে তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি ৩ লাখ টাকা ও মেয়ের অ্যাকাউন্টে ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা জমা পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ইডি।
ইডির দাবি, গত ২০২০ সালের ১৯ জানুয়ারি ভোর ৪টে ২৮ মিনিটে বাকিবুর রহমান তাঁর এক কর্মচারীকে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ করে জানান, ‘এমআইসি’কে টাকা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকার পরিমাণ ৬৮ লাখ। অন্য একটি মেসেজে ১২ লাখ টাকার লেনদেনের উল্লেখ রয়েছে। এই ক্ষেত্রে কয়েকজন সাক্ষী জানিয়েছেন যে, তাঁরা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ‘এমআইসি’ বলেই ডাকতেন। তিনটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে ১২ কোটি ৬ লাখ টাকার ভুয়া শেয়ার প্রিমিয়াম জমা দেওয়া হয়। ইডির জেরায় বাকিবুর জানিয়েছে, ওই সংস্থাগুলি থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু সেই টাকা আর তিনি ফেরৎ দেননি। মূলত ওই সংস্থাগুলির মাধ্যমে সবজি ও খাদ্যশস্য বিক্রি করা হয়। ইডি জেনেছে, গমকল থেকে হাতিয়ে নেওয়া বিপুল পরিমাণ আটা বাইরে কালোবাজারিতে বিক্রি করা হয়েছে এই সংস্থাগুলির মাধ্যমেই। পরে তদন্তে জানা যায় যে, ওই সংস্থাগুলির কর্ণধার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী ও মেয়ে।
বাকিবুরের এক আত্মীয় এই তিনটি সংস্থার মাধ্যমেই ২০ কোটি ২৪ লাখ ১৬ হাজার ১৯৪ টাকা সরিয়েছে বলে ইডির অভিযোগ। এ ছাড়াও গত মার্চে একটি সংস্থার মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকা ও অন্য একটি সংস্থার মাধ্যমে দশ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। একটি সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ও অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে। বাঁকুড়ায় নথিভুক্ত এই সংস্থাগুলির চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হিসাব রক্ষার কাজ করতেন।
ইডি জানিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়ির এক পরিচারককে জেরা করে জানা গিয়েছে, তিনি মন্ত্রীর সুপারিশেই কৃষিদপ্তরে চাকরি পান। যে সংস্থাগুলির মাধ্যমে রেশন বন্টন দুর্নীতির টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ, সেই সংস্থাগুলির কর্ণধার ছিলেন ওই সরকারি কর্মচারীর স্ত্রী ও মেয়ে। ইডির কাছে তাঁদেরও দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জোর করে তাঁদের দিয়ে সই করিয়ে নিতেন। তাঁদের দাবি, টাকা পাচারের জন্য এই ভুয়া সংস্থাগুলি পরিচালন করতেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই। ইডির দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের স্ত্রী ও এক আত্মীয়ার আমেরিকায় যাওয়ার বিমানের টিকিট কেটে দিয়েছিল বাকিবুর রহমান। যদিও পরে আমেরিকা যাত্রা বাতিল করে দেন তাঁরা। কিন্তু বাকিবুরকেই টিকিট বাতিলের জন্য টাকা খরচ করতে হয়। এতেই ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সম্পর্কের প্রমাণ মেলে বলে জানিয়েছে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.