গোবিন্দ রায়: পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়ে গরমের ছুটি কাটাচ্ছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়! অবাক হলেন? হ্যাঁ, অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু নেই, ইনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নন, সমাজবিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ‘সাব-অলটার্ন স্টাডিজ কালেকটিভ’ তথা নিম্নবর্গীয় মানবজাতি সম্পর্কিত ইতিহাস গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন। বর্তমানে আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। তাঁর লেখা বই পড়েই গরমের ছুটি কাটাচ্ছেন বিচারপতি।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। বর্তমানে কলকাতা হাই কোর্ট তথা এ রাজ্যের অন্যতম আলোচিত নাম। এসএসসি মামলায় মন্ত্রী-কন্যার চাকরি খোয়ানো থেকে শুরু করে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে বেনিয়মের অভিযোগে চাকরি বাতিল, নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ শিক্ষা দপ্তরের একাধিক আধিকারিকের গ্রেপ্তার, দীর্ঘদিন চাকরির সত্ত্বেও বকেয়া পেনশন ও প্রাপ্য বকেয়া থেকে বঞ্চিত হওয়াদের প্রাপ্য পাওনা আদায়- এই সবটাই তাঁর কলমের খোঁচাতেই হয়েছে।
যেহেতু এখন হাই কোর্টের ১৫ দিনের গরমের ছুটি চলছে, সকাল সকাল উঠে কোর্টে বেরোনোর কোনও তাড়া নেই। বেলা করেই ঘুম ভাঙছে। আর তিনি শরীরচর্চায় একেবারেই বিশ্বাসী নন। মনে করেন, শরীর থাকলে খারাপ হবে। অবকাশের সকালে রোজ ৮টায় ঘুম ভাঙছে বিচারপতির। এরপর চা, খবরের কাগজের সঙ্গে আর সামান্য কিছু জলখাবারে সকাল সাড়ে দশটা। তারপর গানই সঙ্গী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের। সেই গানের তালিকায় রয়েছে রবীন্দ্রসংগীত কিংবা স্বর্ণযুগের বাংলা গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, শ্যামল গুপ্ত কিংবা সুবীর সেনের পাশাপাশি বিচারপতি অভিজিতের পছন্দের তালিকায় রয়েছে অখিলবন্ধু ঘোষ, সুধীন দাশগুপ্ত, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং শ্যামল মিত্রর গান। খাবারে আমিষ, আরও ভালভাবে বলতে গেলে মাছ বা মাংস তাঁর খুব একটা পছন্দের নয়। তবে দিনে একটা করে ডিম চাই। সবটাই ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা। তেমনভাবেই জানা গিয়েছে, রোজ নিয়ম করে বিভিন্ন তরকারিতে তিনি বড়ি খান। পছন্দ লাউয়ের ঘন্ট ও ধোকা, কোপ্তা। গরমে পটলের নানা পদ দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারছেন। হাই ব্লাড সুগারের কারণেই মূলত আলু একেবারে নাপসন্দ। শেষপাতে চাটনি একটু থাকেই। মিষ্টি পছন্দ করলেও সুগারের কারণেই খাওয়া বারণ। খেলেও বড়জোর দিনে দু-একটা।
বিচারপতি অভিজিৎ যে খাদ্যরসিকের পাশাপাশি আদ্যন্ত বইপ্রেমীও, সেটা অনেকে জানেন। তিনি আবার সিনেমাও দেখতে ভালবাসেন। একা মানুষ, তাই নিজের মতো করেই সময় কাটাতে পারেন। ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, হলে গিয়েই বিতর্কিত ‘দ্য কেরালা স্টেরি’ দেখতে চান। তবে সিনেমা বা সংবাদ ছাড়া টিভি বিশেষ দেখেন না। মাঝেমধ্যে ফুটবল দেখেন। কিন্তু রোজ নিয়ম করে বই পড়া চাই। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গরমের ছুটি তিনি কাটাচ্ছেন ড. পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বই পড়ে। ভাওয়াল রাজার ইতিহাস অবলম্বনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এক রাজ প্রতারক-এর কাহিনি পড়ছেন। ইংরেজিতে লেখা এই বইয়ের নাম, ‘এ প্রিন্সলি ইমপস্টার’। রোজ মোটামুটি ২০ পাতা করে পড়ছেন। ছুটির আগেই শেষ করবেন।
রাজনীতির খবর রাখলেও রাজনীতিবিদদের ছোঁয়া থেকে দূরে থাকতেই ভালবাসেন। ছুটিতে বই পড়ার ফাঁকেই সন্ধেবেলায় বিচারপতির বাড়িতে রোজ নিয়ম করে বসছে ‘চা-আড্ডা’। কখনও সখনও কফি। সেই আড্ডায় আসেন ছোটবেলার পুরনো বন্ধুরা। আড্ডা চলে রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত। মাঝেমধ্যেই কোনও সন্ধ্যায় তিনি আশেপাশে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। দু’দিন আগেই সল্টলেকের এক চাইনিজ রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন। তবে অন্যান্যবার হাই কোর্টের ছুটি পড়লেই তিনি ‘লং ড্রাইভ’-এ বেরিয়ে পড়েন। এবার গরমের ছুটিটা একটু বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে অবকাশ কাটাবেন বলেই ঠিক করে রেখেছিলেন। সেই সঙ্গে যে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে অনেক দিন দেখা হয় না। ইচ্ছে ছিল, তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন। তাই দূরে যাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.