গোবিন্দ রায়: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের গতি নিয়ে ফের ক্ষোভপ্রকাশ করলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। “যত দিন যাচ্ছে গোটা বিষয়টা একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে”, বলেই সিবিআইকে জানান বিচারপতি। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ওএমআর শিট মূল্যায়নকারী সংস্থার কাছ থেকে হলফনামা তলব করেন তিনি।
শুক্রবার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআইয়ের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, “প্রাথমিকের তদন্ত কি পর্যায়ে আছে? কিছু ব্যক্তির পাসপোর্ট পরীক্ষা করেছেন? কতবার বাইরে গিয়েছে দেখেছেন?” উত্তরে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, সে সংক্রান্ত তথ্যের খোঁজ করতে হলে আলাদা করে আবেদন করতে হবে। উত্তরে বিচারপতি বলেন, “আপনার কী মনে হয় পাসপোর্ট জাল করা সম্ভব? আমার তো মনে হয় এটা সম্ভব। বেনামী পাসপোর্ট হয়। খুব সাবধানে কাজ করতে হবে আপনাদের। বেনামে একাধিক পাসপোর্ট থাকতে পারে। খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।”
এরপর সিবিআই তদন্তের গতি নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সামনের মাসে আমি আপনাদের কাছ থেকে রিপোর্ট চাইতে পারি। যত দিন যাচ্ছে গোটা বিষয়টা একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। হচ্ছেটা কী? আমার কাছে বিষয়টা একঘেয়ে হয়ে গেলে, বাকি বাইরের লোকেদের কাছে বিষয়টা একঘেয়ে হয়ে যাবে। ইডি’র আধিকারিকদের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলুন। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।”
২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের ওএমআর শিট মূল্যায়নের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা থেকে তালিকা (Master Data of TET) নিয়ে নম্বর বিভাজন বুঝে নেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এই তালিকায় কত টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়েছে সেই কলাম কোথায়? কটা ভুল উত্তর দিয়েছে সেটা এই তালিকায় কোথায়? এটা মাস্টার ডেটা, এখানে কটা ভুল উত্তর দিয়েছে সেটা থাকবে না? তদন্ত শেষ হলে বুঝতে পারবেন দুর্নীতি কতটা গভীর। পুরো নিয়মে একটা বৃহৎ ফাঁকি আছে। এটা সিবিআই কে দেখতে হবে। একটা তালিকা যেখানে ঠিকুজি আছে, কুষ্ঠি আছে, সব আছে, শুধু বাবার নাম নেই। মাস্টার ডেটা শিটে ভুল উত্তরের সংখ্যা থাকবে না? আমি বিস্মিত হচ্ছি।”
পালটা আদালতে ওএমআর শিট মূল্যায়নের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার আইনজীবী জানান, “পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২০৮ জনের একটা অতিরিক্ত প্যানেলও আমরা তৈরি করেছিলাম। কমপক্ষে ১২ বার এই প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এই তথ্য আমরা পর্ষদকে পাঠিয়েছিলাম। ২০১৭ সালে এই অতিরিক্ত প্যানেল তৈরি করা হয়।” একথা শুনে বিচারপতি বলেন, “এটা তো নতুন তথ্য। এ তো কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে পড়ছে।”
এরপর বেশ বিরক্তির সুরে সিবিআইয়ের আইনজীবী সোমনাথ বিশ্বাসকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, “আপনি আমার জায়গায় চলে আসুন, আমি আপনার জায়গায় চলে যাচ্ছি। কী যে করেন? একঘণ্টা লাগল এটা বুঝতে, আপনার তো আরও আগেই বোঝা প্রয়োজন।” আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ওএমআর শিট মূল্যায়নের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার কাছ থেকে হলফনামা তলব করেছে কলকাতা হাই কোর্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.