সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আন্দোলন নয়, আইনের উপরেই শেষমেশ আস্থা রাখতে হল এরাজ্যের মানুষের সেবায় সদ্য নিয়োজিত হওয়া মেধাবীদের৷ বহু টানাপোড়েন শেষে সপ্তাহখানেক পর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে হবু চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসকরা গেলেন নবান্নে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতির জট কাটাতে৷ গেলেন সমস্যা মিটিয়ে কাজে ফিরতে৷ হাসপাতালগুলিতে পরিষেবা চালু করতে৷ আর নবান্নে বৈঠকের সময়ে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদেরই দেখা গেল সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে৷ আন্দোলনের গর্জন ছেড়ে, একেবারে আবেদনের নরম সুরে কথা বললেন তাঁরা৷
মুখ্যমন্ত্রীকে এনআরএস চত্বরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে, বন্ধ দরজার আড়ালে নয়, সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে৷ এই শর্তে আন্দোলনকারীরা গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে একেবারে অনড় হয়েছিলেন৷ শর্তের কাছে কে, কতটা নমনীয় হবে, তা নিয়ে কার্যত স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন ছাড়া অন্যত্র বৈঠকে নারাজ ছিলেন, তেমনই জুনিয়র ডাক্তাররাও সংবাদমাধ্যমের সামনেই আলোচনা চাইছিলেন৷ রবিবার থেকে সোমবার অর্ধেক দিন পর্যন্ত এনিয়ে দড়ি টানাটানি পরিস্থিতির পর আন্দোলনকারীরা নবান্নে যেতে রাজি হলে, তাঁদের লাইভ কভারেজের দাবিও মেনে নেন মুখ্যমন্ত্রী৷ স্বাস্থ্য দপ্তরের পাঠানো বাসে এনআরএস থেকে আলোচনাকারীরা নবান্নে পৌঁছান৷ প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২ জন করে প্রতিনিধি-সহ মোট ৩১ জন ছিলেন দলে৷ বিকেল চারটে নাগাদ শুরু হয় দু’পক্ষের বৈঠক৷মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব রাজীব সিনহা, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য৷ ছিলেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা, ডিজি বীরেন্দ্র৷
আর বৈঠকের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত নিজেদের অভাব-অভিযোগের কথা বললেন জুনিয়র ডাক্তাররা, তবে সুর অনেক নরম৷ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘আমরা নিরুপায় হয়ে এখানে এসেছি৷ আমাদের আগে এত ভয়ের সঙ্গে কাজ করতে হতো না৷ একজন ডাক্তারকে এত মার খেতে হল, এই স্পর্ধা আগে দেখিনি৷ এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ আপনি আমাদের অভিভাবকের মতো, আপনার উপর পূর্ণ আস্থা আছে৷ আমরা দ্রুত কাজে ফিরতে চাই৷ যদি সম্ভব হয়, নিরাপত্তা আরও সুনিশ্চিত করা হোক৷’ অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকরাও দাবিদাওয়া জানালেন, তবে আন্দোলনের সুর থেকে প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে৷ কিছুটা প্রার্থনাই যেন করলেন, নিজেদের সুরক্ষা আরেকটু সুনিশ্চিত করতে৷
তবে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভূমিকাও এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়৷সমাধান বের করে তাঁদের কাজে ফেরাতেই তিনি যেন বদ্ধপরিকর৷ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে সমস্তটা শুনলেন, সমাধান হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শও দিলেন৷ অভিযোগ ছিল, এমারজেন্সিতে রোগীর সঙ্গে বহু মানুষ ঢুকে পড়েছেন৷ তারাই পরবর্তী সময়ে সমস্যা বাঁধাচ্ছেন৷ এর সমাধানে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, এমারজেন্সি বিভাগের বাইরে কোলাপসিবল গেট বসানো হোক৷ রোগীর সঙ্গে দু’জনের বেশি প্রবেশে জারি হোক নিষেধাজ্ঞা৷ তাহলে অশান্ত পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমবে৷ এছাড়া রোগীর পরিবার এবং ডাক্তারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে অনেক ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়, যা থেকে পরে সমস্যা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, এই সমন্বয়ের জন্য হাসপাতালগুলিতে ৩টি শিফটে আলাদা করে জনসংযোগ আধিকারিক নিয়োগ করা হোক৷ যাঁরা চিকিৎসাধীন ব্যক্তি এবং তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন, তথ্য আদানপ্রদান করবেন৷ তাঁর তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ, চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করতে সরকারি হাসপাতালের জন্যও চালু হোক পাবলিক গ্রিভান্স সেল৷
মেনে নেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের সুরক্ষা সংক্রান্ত দাবিও৷ রাতে হাসপাতালের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য আলাদা করে পুলিশ নিয়োগ করা হবে৷ থাকবেন নোডাল অফিসারও৷ দ্রুতই বিজ্ঞপ্তি জারি করে এসবের সমাধান চলবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও আশ্বাস, এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত সমাধান হবে৷ কোনও ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোনও মিথ্যে মামলা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ এসবের পর আশা করা যায়, আজ সন্ধে থেকেই রাজ্যের থমকে যাওয়া স্বাস্থ্য পরিষেবা সচল হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.