স্টাফ রিপোর্টার: টানা তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রৌনক সাহার মৃতদেহ৷ রবিবার দুপুরে গঙ্গার ফেয়ারলি ঘাটের জেটির তলা থেকে উদ্ধার হয় রৌনকের মৃতদেহ৷ এদিন ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন রৌনকের বাবা সুব্রত সাহা৷ এদিন তিনি জানান, “রৌনকের চার বন্ধুর বাবা-মা রবিবার সকালে বাড়িতে এসে মুখ বন্ধ রাখার কথা বলেন৷ এমনকী, রৌনকের বন্ধু অনুরাগের বাবা সরাসরি টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছেন৷ কেস উঠিয়ে নেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে৷ এই ঘটনায় অনুরাগ ও অন্য বন্ধুরাও জড়িত বলে মনে হচ্ছে৷
একই সঙ্গে মাঝির বয়ানেও রয়েছে একাধিক অসঙ্গতি৷” রবিবারের এই ঘটনার জেরে এবার খুনের অভিযোগ দায়ের করা হবে বলেও জানিয়েছেন রৌনকের বাবা সুব্রত সাহা৷ ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করা হবে বলেও জানিয়েছে রৌনকের পরিবার৷ পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার দুপুরে ফেয়ারলি ঘাটের জেটির তলায় একটি মৃতদেহ ভাসতে দেখেন লঞ্চ যাত্রীরা৷ তাঁরাই ঘাটে উঠে প্রথমে বিষয়টি জানান কাছের একটি পুলিশ কিয়স্কে৷ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ৷ জেটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় রৌনকের মৃতদেহ৷ পুলিশ জানিয়েছে রৌনকের দেহে প্যাণ্ট ও জুতো থাকলেও ছিল না কোনও জামা৷ এর পর মৃতদেহ পাঠানো হয় এসএসকেএমের মর্গে৷ এরপর রৌনকের প্রাথমিক শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার জন্য খবর পাঠানো হয় রৌনকের পরিবারকে৷ কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড শাখা এই ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ না করলেও তাঁরা থানাকে সাহায্য করার জন্যই এই জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গিয়েছে৷
পুলিশ এখনও পর্যন্ত রৌনকের এই গঙ্গায় পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মাঝিকে গ্রেফতার করলেও তাঁর বন্ধুদের বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছে৷ তার জেরেই বৃহস্পতিবার থেকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বন্ধুদের৷ মাঝির ও রৌনকের বন্ধুদের একাধিক অস্পষ্ট বয়ান সামনে আসায় সন্দেহ গাঢ় হতে শুরু করে৷ রৌনকের পরিবার এর পর একটি গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করে৷ কিন্তু একাধিক প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি কেউ৷ এই ঘটনার পর কেন মাঝি ওই যুবককে উদ্ধার না করে জোর করে বাকি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘাটে চলে আসেন? কেন মাঝি জলে ঝাঁপিয়ে রৌনককে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি? রৌনকের বন্ধু অনুরাগ সাঁতার জানা সত্ত্বেও কেন বন্ধুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি? রৌনকের বান্ধবীদের বয়ান অনুযায়ী তাঁরা অনুরাগকে বাঁচানোর কথা বললেও সে রাজি হয়নি? অন্যদিকে এদিন রৌনকের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর আরও বেশ কিছু তথ্য পুলিশের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ রৌনকের প্যাণ্ট ও জুতো দেহের সঙ্গে পাওয়া গেলেও জামা কোথায়? জামা কি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে না রৌনক পড়ে যাওয়ার আগেই তাঁর পরনে কোনও জামা ছিল না? রৌনকের শরীরে কোনও বড় আঘাতের চিহ না হলেও বুকে ও পিঠে দু’টি দাগ পাওয়া গিয়েছে৷ সেগুলি আগে থেকে ছিল না এই ঘটনার জেরে হয়েছে তা জানা যাবে ময়নাতদন্তের রিস্তারিত রিপোর্টে জানা যাবে৷ একই সঙ্গে এই ঘটনার আগে রৌনককে কোনও মাদক মেশানো পানীয় খাওয়ানো হয়েছিল কি না তাও জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.