প্রতীকী ছবি।
রমেন দাস: কতটা কান পাতলে পরে কান্না শোনা যাবে/কত হাজার মরলে তবে মানবে তুমি শেষে! এ পথেও লড়াই আছে, কান্নাভেজা গলায় এগিয়ে যাওয়াও আছে নিরন্তর। আর সেই লড়ে যাওয়ার কঠিন পথেই একাকী লড়ছেন এক প্রৌঢ়। নদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসে কলকাতার আদালতে বিচারের জন্য হাহাকার করছেন তিনি! আজও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) বাংলা বিভাগের (Bengali Department) প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর (JU Student Death) সুবিচার চাইছেন তাঁর বাবা।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাই কোর্টে (Calcutta High Court) এসেছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কেরানি। বড় ছেলের মৃত্যুর বিচারের খোঁজে অসুস্থ স্ত্রীকে বাড়িতে রেখেই এসেছিলেন আদালতে। তারপর? ক্লান্ত চোখ আর কান্নাভেজা গলায় তাঁর দাবি, ”শুধু এই আদালত নয়, বারবার আইনের উপর ভরসা রেখেই আলিপুরের আদালতেও (Alipore Court) যাচ্ছি। আমি জানি বিচার একদিন পাবই। আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার না পেয়ে আমি থামব না! ভরসা আছে দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি। কিন্তু নিজেও তো আরও বৃদ্ধ হচ্ছি। লড়তে হবে তবুও!” অর্থ, শরীর খুব একটা সঙ্গ না দিলেও মৃত ছাত্রের বাবা বলছেন, ”আমার স্ত্রী অসুস্থ। সারাক্ষণ গোপাল গোপাল করে কাঁদে ওর মা। ছোট ছেলেটাও আর ঠিক নেই। আমিই আসি কলকাতায়। যোগাযোগ করি সবার সঙ্গে। যদি আমার ছেলের সঙ্গে অপরাধের সুবিচার পাই!”
যদিও প্রায় ৭ মাস পর খানিকটা আশার আলো দেখছে মৃত ছাত্রের পরিবার। সূত্রের খবর, আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে পারে চূড়ান্ত শুনানি। আলিপুরের পকসো আদালতে চলবে ‘ট্রায়াল’ (Trial)। অভিযুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে গত অক্টোবরে জমা পড়েছে চার্জশিট (Charge Sheet) । যেখানে অপরাধের ধরন অনুযায়ী, একাধিক ধারা দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। সরাসরি খুনের ধারা যুক্ত না হলেও আইপিসি ৩০৫, ৩৪ থেকে শুরু করে পকসো (POCSO) আইনের ১০, ১২, ১৭ ধারা রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
এর সঙ্গে রয়েছে ২০২০-র রাজ্যের র্যাগিং প্রতিরোধ আইনের ৪ নম্বর ধারাও। সব মিলিয়ে অভিযুক্ত ছয় বর্তমান এবং ছয় প্রাক্তন ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ শাস্তিও হতে পারে বলেই দাবি আইনজ্ঞদের। পুলিশ সূত্রে দাবি, সৌরভ চৌধুরী-সহ অভিযুক্ত ১২ জনের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এমনকী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে নাবালক ছাত্রের যৌন হয়রানির ভূরি ভূরি প্রমাণ মিলেছে বলেই দাবি।
গত বছরের ৯ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলে (Jadavpur University Main Hostel) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় বাংলা বিভাগের নবাগত ছাত্রের। তারপরই তোলপাড় হয় দেশ। ছাত্রের মৃত্যুতে উঠে আসে খুনের অভিযোগও। যৌন হয়রানি থেকে শুরু করে সিনিয়রদের অত্যাচার, একের পর এক অভিযোগে বিদ্ধ হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে জলঘোলাও হয় বিস্তর।
উল্লেখ্য, গত ১৯ তারিখ কলকাতা হাই কোর্টে অভিযুক্ত এক জনের করা জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। যদিও অভিযুক্তের আইনজীবীর পক্ষে শুনানির পরে সেই আবেদন প্রত্যাহার করা হয় বলে সূত্রের খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.