অরিজিৎ সাহা: ভাঙাগড়ার চাকায় ঘুরে ফের সুদিন ফিরছে বউবাজারের ধসপ্রবণ এলাকার বাসিন্দাদের। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে, আতঙ্ক কাটিয়ে নতুন ঘর উঠেছে স্যাকরা পাড়া, দুর্গা পিতুরী লেনের ভেঙে পড়া এলাকায়। এসবের মাঝে দুর্গাপুজোর আনন্দ সেখানে প্রবেশ করতে না পারলেও, ধনদেবীর আরাধনা থেকে পিছিয়ে রইলেন না বাসিন্দারা। আজ, কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট মেনে বউবাজারের ঘরে ঘরে চলল পুজো।
সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর টানেল খোঁড়ার কাজ চলাকালীন ধস নামে বউবাজার এলাকায়। টানেল বোরিং মেশিনের তীব্র কম্পন, জলময় সুড়ঙ্গের কারণে নিমেষের মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি। আরও কয়েকটি বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়, পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয় প্রশাসনের কপালে। সমগ্র বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মেট্রো কর্তাদের নিয়ে তড়িঘড়ি নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। ভিটেমাটি হারানো ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন তিনি। এরপর মেট্রোর কাজে ইতি তো পড়েই। নতুন ঘরদোর তৈরির কাজ শুরু হয়। পুজোর আগেই কয়েকটি পরিবার ফিরেছে নতুন বাড়িতে। কিন্তু তা হলেও এবছর দুর্গাপুজোর আনন্দে সেভাবে শামিল হতে পারেননি এখানকার বাসিন্দারা।
তবে লক্ষ্মীপুজোর মাহাত্ম্য তো ভিন্ন। তাতে বিশেষ জাঁকজমক নেই, আয়োজনও কম। কিন্তু আরাধনার গুরুত্ব অনেক। মেট্রোর কাজ চলাকালীন বউবাজারের পুরনো, খ্যাতনামা সোনার দোকানগুলিও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আতঙ্কের জেরে। প্রচুর ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তাই ঘরে লক্ষ্মী ফেরাতে তাঁর আরাধনায় মেতে উঠলেন বাসিন্দারা। ছোট ঘরেই সামর্থ্যমতো আয়োজন করে, দেবীর সিংহাসন সাজিয়ে, মন্ত্রপাঠের মধ্যে দিয়ে নিষ্ঠাভরে চলল পুজো। পরিবারের ছোট থেকে বড় সদস্যরা সকলেই করজোড়ে মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করলেন, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এবার যেন সুদিন ফেরে। হারিয়ে যাওয়া ধনসম্পদের মায়া ভুলে নতুন করে সব যেন গড়ে ওঠে। আর এই লক্ষ্মীপুজো ঘিরেই বউবাজারের ভাঙাচোরা পরিবেশে যেন প্রাণ ফিরল। বোঝা গেল, ধ্বংসের যন্ত্রণা ভুলে উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে কলকাতার এই পুরনো পাড়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.