স্টাফ রিপোর্টার: এক সপ্তাহ পরই ধনতেরস। তারই তোড়জোড় চলছিল বউবাজারের সোনার দোকানে দোকানে। নতুন রঙের প্রলেপ। ডিসকাউন্টের ঝুড়ি ঝুড়ি বিজ্ঞাপন। কিন্তু! শুক্রবারের ভোর যেন ফের তিন বছর আগের স্মৃতি ফিরিয়ে দিল এখানকার স্বর্ণব্যবসায়ীদের। বউবাজারের সোনাপট্টিতে বিপত্তি যেন পিছু ছাড়ছে না। ধনতেরসের আগেই ফের অন্ধকার নেমে এল সোনাপট্টিতে। মদন দত্ত লেনের একের পর এক বাড়িতে ফাটল ধরতেই এদিন সকালে ফাঁকা করে দেওয়া হল অন্তত ৫০টি সোনার দোকান। দোকানের জিনিস গুটিয়ে চোখের জল সম্বল করে বাড়ি ফিরলেন ব্যবসায়ীরা। ‘গয়নার মজুরিতে ছাড়’ লেখা সাইনবোর্ড লুটোপুটি খেল মাটিতে। ফিরে এলে ২০১৯ সালের দুর্গা পিতুরি লেনের স্মৃতি।
মেট্রোর কাজের জন্য ২০১৯ সালেই বউবাজারের দুর্গা পিতুরির একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। ছোট-ছোট সোনার কারখানাগুলোতে তালা ঝোলে। নষ্ট হয় সোনার দোকানের বেচাকেনাও। তারপর করোনা। দোকান বন্ধ। দু’বছর পর যখন সোানাপট্টি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ফিরে এল পুরনো স্মৃতি। এদিন বাড়ি ফাটলের খবর পাওয়া মাত্র মদন দত্ত লেনের আশপাশে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের উপর থাকা একাধিক সোনার দোকানের ব্যবসায়ীরা এসে দোকান থেকে গয়না বের করে নিয়ে যান। ঝুলিয়ে দেন তালা। নামিয়ে দেন শাটার।
১৩/১ দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দা সোনালি শীলের সোনার দোকান বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের উপর। এদিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল দোকান অন্ধকার। সমস্ত শোকেস ফাঁকা। ব্যাগ ভর্তি করে গয়না ভরে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ছলছল চোখে বলেন, ‘‘এখানে আর ব্যবসা করা যাবে না। মেট্রোর কাজে আমাদের বাড়ি ফেটে গিয়েছিল ২০১৯ সালে। তিন বছর ধরে ফুলবাগানের ভাড়াবাড়িতে আছি। ধনতেরসের আগে ব্যবসাটা জমবে ভেবেছিলাম। কিন্তু সব শেষ।’’
পাশাপাশি সমস্ত দোকানেই শাটার পড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, পুলিশ এসে দোকান বন্ধ রাখতে বলে গিয়েছে। ধনতেরসের সময় সোনার দোকানে সবথেকে বেশি ক্রেতা আসে। তখনই দোকানে ঝাঁপ পড়ল। কিছুটা দূরেই দোকান বিজয় জয়সওয়ালের। আলো নিভে গিয়েছে। বলেন, ‘‘এভাবে কী ব্যবসা হয়। দুর্ভাগ্য যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে গিয়েছ। কিছুতেই কাটছে না।’’ ফের সোনাপট্টি থমথমে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ব্যবসায়ীরা। কবে দোকানের শাটার উঠবে, ফের পুরনো ছন্দে বেচাকেনা হবে, তা জানেন না কেউই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.