ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: শিয়ালদহের কাছাকাছি একটি জায়গায় ব্যক্তিটির বসবাস বলে জানতে পেরেছিলেন গোয়েন্দারা। ‘চাচা’ নামেই পরিচিত ছিল সে। পুলিশের হাতে জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি অভিযোগে দুই পাকিস্তানি যুবক ধরা পড়ার পরই পালিয়ে যায় শিয়ালদহের ‘চাচা’। ১২ বছর আগে এই গ্রেপ্তারির তদন্ত করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর এসেছিল যে, কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিরা। আর সেই নেটওয়ার্কের মধ্যেই তথা জইশের স্লিপার সেলের মাথা ছিল ‘চাচা’।
এর পর কেটে গিয়েছে প্রায় এক যুগ। কিন্তু শিয়ালদহের সেই ‘চাচা’র সন্ধান আর মেলেনি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, এর পর শহরে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি সংগঠনের মডিউলের সন্ধান মিলেছিল। শহর থেকে ধরা পড়েছিল হুজি সংগঠনের জঙ্গিরাও। এ ছাড়াও বছর কয়েক আগে কলকাতায় বাংলাদেশের জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) সংগঠনের নেটওয়ার্কের সন্ধানও মিলেছিল। তাই এখন নতুন করে জইশ-ই-মহম্মদের স্লিপার সেল কলকাতায় কাজ করছে কি না, তা নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়। যদিও কাশ্মীরে সিআরপিএফের উপর হামলার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কলকাতায় জইশের নেটওয়ার্কের উপর নজরদারি শুরু করেছে। এক গোয়েন্দা আধিকারিকের মতে, এত বছর পর জৈশ আবার কলকাতায় নেটওয়ার্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছে কি না, তা প্রমাণসাপেক্ষ। যদিও তখন এই নেটওয়ার্কে যে বা যারা ছিল, তাদের সন্ধান আর মেলেনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ বছর আগে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের একটি গ্রাম থেকে সন্দেহের বশে এলাকার বাসিন্দাদের সহযোগিতায় দুই যুবককে ধরেছিল বিএসএফ। তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের অভিযোগ ছিল, তারা দু’জনই পাকিস্তানি। জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়। ওই সময় সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীকালে আদালতের নির্দেশে তারা ছাড়া পায়। কিন্তু গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গি অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেফতারির পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া কিছু তথ্য ও দু’জনকে জেরা করে জানা গিয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল মধ্য কলকাতার শিয়ালদহের বাসিন্দা এক ব্যক্তির। তাকে তারাও ‘চাচা’ নামে ডাকত।
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, সেই ‘চাচা’ ছিল কলকাতার জৈশের নেটওয়ার্কের এক মাথা। মূলত এই জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেল চালাত সে। কলকাতা হয়ে জইশের যে জঙ্গিরা দেশের অন্যান্য জায়গায় যেত, তাদের জন্য ট্রেনের টিকিট জোগাড় করা থেকে শুরু করে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও করে দিত সেই ‘চাচা’। এমনকী, ‘চাচা’র চেষ্টায় পূর্ব কলকাতার কয়েকটি জায়গায় জৈশের স্লিপার সেল গড়ে ওঠে বলেও খবর পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। দরজির দোকান-সহ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশিও চালিয়েছিলেন গোয়েন্দারা। ‘চাচা’র সন্ধানেও একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, ধরা পড়ার ভয়ে সম্ভবত দেশ ছেড়ে পালায় সে। তাই পাকিস্তানে গিয়ে সে জইশের নেতাদের আশ্রয় নিয়েছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাই ‘চাচা’ বা তার মতো কেউ যাতে শহরে নতুন করে জইশ-ই-মহম্মদের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে না পারে, সেই বিষয়ে সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
[পুরুলিয়ায় মাওবাদী হামলা রুখতে মহড়া সিআরপিএফের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.