ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: তৃণমূল ভবন এবার নিশানা করল রাজভবনকে। দুর্নীতি ইসুতে মঙ্গলবার আরও তীব্র করল রাজ্যপালের (WB Governor) উপর চাপ বাড়ানোর প্রক্রিয়া। একদিকে জৈন হাওয়ালা মামলার নথি তুলে দেখাল সেখানে জগদীপ ধনকড়ের নাম রয়েছে। এমনকী, জানা যায় এই মামলার আইনি জটিলতা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, তার চার্জশিট তো দূরঅস্ত, ট্রায়ালই হয়নি। অথচ, রাজ্যপাল বলছেন চার্জশিটে তাঁর নাম নেই। তৃণমূলের (TMC) প্রশ্ন, এই প্রসঙ্গ আগ বাড়িয়ে কেন তুললেন রাজ্যপাল? একইসঙ্গে তাঁর কাছেই দলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়ের দাবি, নথিতে মেলা এই ‘ধনকড়’ নামের ব্যক্তিটি কে, সেটা রাজ্যপালই জানান।
রাজ্যপালকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে একদিন আগেই ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে তার প্রতিক্রিয়ায় এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে সাফাই দিতে নামেন রাজ্যপাল। পাল্টা তারও প্রতিক্রিয়া দিয়ে জৈন হাওয়ালা মামলা নিয়ে ধনকড়ের বিরুদ্ধে পথে নেমে পড়ে তৃণমূল। সেই পর্বের ধার দ্বিতীয় ভাগে এদিন তৃণমূল বাড়িয়েছে কয়েক গুণ।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জনৈক ‘ধনকড়ে’–র নাম লেখা জৈন হাওয়ালা মামলার নথি তুলে ধরেন এদিন। মামলাটি নয়ের দশকের। অভিযোগ, হিজবুল মুজাহিদিন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর হাতে হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে সন্ত্রাসে মদত দেওয়া হত। সেখানে নানাভাবে এ দেশের মন্ত্রী, সাংসদদের উৎকোচ দেওয়া এবং নানা রাজ্যে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার সুযোগও দেওয়া হত। যেখানে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার নামও উঠে আসে। সেই মামলাতেই জৈনদের একটি ডায়ারিতে ধনকড়ের নামের উল্লেখ মেলে। পাশে লেখা ‘পাঁচ লক্ষ’ কথাটি। সঙ্গে অভিযুক্তদের তালিকা দেওয়া একটি নথি। সেখানেও জনৈক ‘জগদীপ ধনকড়’ নামটি লেখা, যার পরিচয় হিসাবে লেখা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ডেপুটি মন্ত্রী।
সুখেন্দুবাবুর কথায়, “আমরা দেখতে পাচ্ছি এই অভিযুক্তের তালিকায় একজন ধনকড়ের নাম রয়েছে। এই তালিকা আদালতেও জমা পড়েছে।” সুখেন্দুবাবুর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২৩ এপ্রিল ১৯৯০ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত জনৈক জগদীপ ধনকড় ভিপি সিংয়ের জনতা সরকারের সংসদীয় মন্ত্রকে ডেপুটি মন্ত্রী ছিলেন। তার পর চন্দ্রশখরের মন্ত্রিসভায় ১৯৯১–এর মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব মন্ত্রকের ডেপুটি মন্ত্রী ছিলেন একই ব্যক্তি। সেই সময়ই জৈন হাওয়ালা–কাণ্ড। তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, “সেই মামলা চলাকালীন একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে সেই ধনকড় আর এই ধনকড় একই ব্যক্তি কিনা, তা ধনকড়রাই বলতে পারবেন।”
সোমবার রাজ্যপালের দাবি ছিল, চার্জশিটে ছিল না বলে। এমনকী, এই মামলায় সবাইকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। সুখেন্দুবাবুর দাবি, ‘অর্ধসত্য’ বলেছেন রাজ্যপাল। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সাংবাদিক বিনীত নারায়ণ একটি ভিডিও বার্তায় এ রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে সরাসরি মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে হাওয়ালা মামলার তদন্তের আবেদন জানিয়েছিলেন বিনীত। তাঁর কথায়, “সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর (ধনখড়) মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়। আমি তাঁকে প্রশ্ন করব, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে চলা জৈন হাওয়ালা মামলার অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ তিনি দিতে পারবেন কি?” সাংবাদিক বৈঠকে বিনীতের কথা তুলেছেন তৃণমূল সাংসদও। সুখেন্দুবাবু তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, সিবিআই মামলা দায়ের করেছিল। আর এনফোর্সমেন্ট জিরেক্টরেট বিদেশি মুদ্রা আইনে মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু তার ট্রায়ালই হয়নি। তাঁর কথায়, “সুপ্রিম কোর্ট মনিটর করতে গিয়ে আইনি গোলকধাঁধায় মামলাটি জড়িয়ে যায়। ত্রিশ বছর হয়ে গেল মামলাটির নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। ট্রায়াল হয়েছে বলেও জানা যায়নি। সুতরাং অব্যাহতি পাওয়ার প্রশ্ন নেই।”
বিশিষ্ট বেশ কিছু নাম এই মামলায় জড়িয়ে ছিল বলেই ‘অদ্ভুতভাবে এই মামলার নিষ্পত্তি ঘটল না’ বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ। এমনকী, অভিযুক্তদের তালিকায় জগদীপ ধনকড়ের পাশাপাশি কেরলের বর্তমানের রাজ্যপালের নামও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সুখেন্দুবাবুর কথায়, “এত কিছু পর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এমন একটা শিশুসুলভ ভাব করলেন, যেন কিছুই হয়নি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.