কৃষ্ণকুমার দাস: নিকাশি নালার সংস্কার নিয়ে বলতে উঠে বিজেপি কাউন্সিলরের ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার উত্তাপ ছড়াল কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে। বিষয়টি নিয়ে শাসক তৃণমূলের কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিজেপির জনা চারেক জনপ্রতিনিধির অধিবেশন কক্ষেই এক রাউন্ড বাগ-যুদ্ধও হয়। পরে মেয়র ফিরহাদ হাকিম অভিযোগ করেন, “উন্নয়নের ইস্যু ছেড়ে ধর্মীয় ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। কলকাতা পুরসভা থেকে একসময় স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। বিজেপির এই বঙ্গ সংস্কৃতি-কৃষ্টি ধ্বংসের চেষ্টার বিরুদ্ধে শহরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পুরভবন থেকেই ফের নয়া লড়াই শুরু হবে।”
বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বিজেপি পুরদলের নেত্রী মীনাদেবী পুরোহিত অধিবেশন শেষে জানিয়ে দিয়েছেন, “পুরসভার আইনে অধিবেশনে এসে ভগবানের নাম নিতে কোনও আপত্তি নেই। তাই যখনই সুযোগ পাব তখনই ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেব।” পুরসভার অধিবেশনে এদিন এক্সিট পোলের প্রভাব ছিল চোখে পড়ার মতো। অধিবেশন শুরু থেকে শেষ, এমনকী চেয়ারপার্সন মালা রায়ের ঘরেও কাউন্সিলরদের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল সমীক্ষার ফলাফল। কার ওয়ার্ডে কত ভোট কে পেল তা নিয়ে সব কাউন্সিলরই নিজেদের লড়াই ও ভোটে পরিশ্রমের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। কিন্তু পুরসভার অধিবেশনে নিকাশি নিয়ে বলতে উঠে বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত ‘ভারত মাতা কী জয়’ ও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন। কিন্তু জয় শ্রীরাম বলা মাত্রই শাসক দলের কাউন্সিলররা হইহই করে ওঠেন।
এরপর নিকাশি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে উঠে অকারণে ধর্মীয় ভাবাবেগ উসকে দেওয়ার চেষ্টার জন্য মীনাদেবীকে তুলোধোনা করেন বিভাগীয় মেয়র পারিষদ তারক সিং। নাম না করে মোদির স্ত্রীকে ছেড়ে আসার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তারক বলেন, “আপনি কোন শ্রীরামের কথা বলছেন? রামায়ণের শ্রীরামচন্দ্র তো স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বনবাসে গিয়েছিলেন। স্ত্রীর জন্য যুদ্ধ করেন। কিন্তু আপনাদের রামচন্দ্র তো স্ত্রীকে অনাদরে ফেলে এসে রাজসুখ ভোগ করছেন।” টেবিল চাপড়ে সমস্বরে সমর্থন করেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। এরপরই বিজেপি কাউন্সিলরকে হিন্দুত্ব নিয়ে আক্রমণ করে মেয়র পারিষদ তারক সিং। পাল্টা আবেগ দিয়ে তিনি বলেন,“ আপনি তো গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরামের হিন্দুত্ব চালু করতে চাইছেন। কিন্তু আমরা বিবেকানন্দ, রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি। আমরা গডসে বা গোধরার দাঙ্গার রক্তপাতে বিশ্বাস করি না। আমরা সেই হিন্দুত্বে আস্থা রাখি যা মানুষকে ভালবাসতে শেখায়, পাশে থাকতে শেখায়।” পুরসভা সূত্রে খবর, মীনাদেবী ‘ জয় শ্রীরাম’ ভাষণে জুড়লেও চেয়ারপার্সনের সম্মতিতেই মাসিক অধিবেশনের রেকর্ড থেকে ওই শব্দ দুটি বাদ দেওয়া হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.