স্টাফ রিপোর্টার: কলকাতায় বেড়াতে আসুক বা চাকরির খুঁজুক। ডেরা সেই হস্টেলই। বলা যায়, প্রাক্তনীদের নিখরচার ‘গেস্ট হাউস’ (Guest House) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হস্টেলগুলি। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিনিয়র পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রাক্তনীদের সমঝোতাতেই বছরের পর বছর ধরে এই ব্যবস্থা চলে আসছে। যে ব্যবস্থার প্রধান ও অন্যতম ভুক্তভোগী হন প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারাই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University)গবেষক-পড়ুয়া মাহামুদুল হাসান গায়েনের কথায়, “কিছু প্রাক্তনীকে দেখেছি হস্টেলে থাকতে। তাঁদের মধ্যে কেউ হয়তো কলকাতার (Kolkata) কোথাও চাকরি করেন। তিনি অফিসের ছুটিতে শনি, রবিবার চলে এলেন। কেউ বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। তিনি কলকাতায় এসে হয়তো এক সপ্তাহ, ১০ দিন থাকলেন। এখানে থেকে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতেও দেখেছি অনেককে। তবে, হস্টেলে দিনের পর দিন থাকাটা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। বিশেষত, পাসআউট হওয়া পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া বলেন, “সারা বছর ধরে পাসআউটরা হস্টেলে থাকেন। এক কথায় তাঁরা কোনও দিন হস্টেল ছাড়েনই না। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের এসে সিনিয়রদের মানিয়ে নিতে হয়। সিনিয়ররাও তাঁদের দমিয়ে রাখেন বিভিন্নভাবে। আর এই সিনিয়রদের সঙ্গেই তাল রেখে চলেন প্রাক্তনীরা।” ওই ছাত্র আরও বলেন, “বাইরে থাকতে গেলে ৮-১০ হাজার টাকা লাগবে। এখানে প্রায় খরচই নেই। ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। খরচ কমে যাচ্ছে। প্রাক্তনীদের হস্টেল ছেড়ে না যাওয়ার এটা অন্যতম কারণ।”
প্রসঙ্গত, স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের মেন হোস্টেলের (Main Hostel) A-1 ও A-2 ব্লকে থাকা প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের অস্থায়ীভাবে নিউ বয়েজ হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে প্রাক্তনী ও বহিরাগতদের হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, এতদিন ধরে থাকছিলেন প্রাক্তনীরা, পদক্ষেপ নিতে এত দেরি কেন? ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় বলেন, “আমার কাছে সেভাবে রিপোর্ট নেই। হোস্টেলে যারা আসেন, তাঁরা ভিজিট করতে আসেন বলে সুপার জানান।” জানা গিয়েছে, মূলত আবাসিকদের ‘অতিথি’ হিসাবেই হস্টেলে থাকেন প্রাক্তনীরা। এ বিষয়ে রজতবাবু বলেন, “গেস্ট রাখার কোনও নৈতিক সিদ্ধান্ত নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। হস্টেলে ভিজিটর্স রুম রয়েছে। সেখানে ভিজিটর আসবে, দেখা করে চলে যাবে। এর বাইরে লিখিত আর কোনও নীতি নেই। তা সত্ত্বেও এভাবে হস্টেলে থাকার কোনও ঘটনা নজরে এলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার বোর্ডে আলোচনা হত। তারপর কেস-টু-কেস ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হত।”
যদিও অধ্যাপক থেকে পড়ুয়া, প্রায় সব মহলই জানিয়েছেন, বহু বছর ধরেই ‘অতিথি’ হিসাবে হস্টেলে থাকছেন প্রাক্তনীরা। তবু তা কীভাবে কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। তবে, অতীত যাই হোক, ভবিষ্যতে প্রাক্তনীরা যাতে হস্টেলে না থাকেন, তা সুনিশ্চিত করা হবে বলে দাবি ডিনের। তিনি বলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। আমরা নিশ্চিত করব পাসআউট পড়ুয়ারা যাতে না থাকেন।” বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের দাবি, আবাসিক নন, এমন যাঁরা হস্টেলগুলিতে থাকছিলেন, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। আফসুর (AFSU) সদস্য শৌর্যদীপ্ত রায় বলেন, “প্রাক্তনীদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তো রয়েইছে। বছরের পর বছর ধরে র্যাগিং-এর কাজটা চলছে। আমরা বারবার বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছি, হস্টেলটা টুরিস্টদের গেস্ট হাউস নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.