ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: নিয়ম আছে। কিন্তু সবাই মানলে তো! কলেজে ভরতির ক্ষেত্রে থাকবে না ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা। পড়ুয়া নয়, হেল্প ডেস্ক’-এর দায়িত্বে থাকবেন কলেজের আধিকারিকরাই। ভরতিতে দুর্নীতি এবং ছাত্র হেনস্তা রুখতে চলতি বছর এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর৷ কিন্তু সরকারি নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রকাশ্যে নিয়মভঙ্গ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই! অভিযোগ, শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন প্রকাশ্যেই টাকার বিনিময়ে পুরনো প্রশ্নপত্র বিলি করছে। টিএমসিপি নেতৃত্বের দাবি, দলীয় নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত।
সংগঠনের সদস্যদের ব্যাখ্যা, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভরতি নয়, প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে পুরনো প্রশ্নপত্র দিয়েই পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যেই হেল্প ডেস্ক খোলা হয়েছে। অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (আফসু) সভাপতি, এসএফআইয়ের দেবরাজ দেবনাথ মঙ্গলবার জানান, “শুধু পুরনো প্রশ্নপত্র নয়, প্রতিবছরই ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ভরতির ফর্ম ফিল আপ করতেও সাহায্য করি আমরা।” তাঁর কথায়, “বহু ছাত্রছাত্রী সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে এখনও ধাতস্থ না হওয়ায় আমাদের কাছে সাহায্য চায়। এছাড়া পড়ুয়াদের নথিগত সমস্যা হলে অরবিন্দ ভবনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিয়ে গিয়ে সমস্যার সমাধান করি।” কিন্তু প্রশ্নপত্র বিক্রির যে অভিযোগ? দেবরাজের সাফ জবাব, “পুরনো প্রশ্নপত্র বিক্রিতে কোনও দুর্নীতি নেই। বাজারে কাগজ এবং কালি কিনতে যতটুকু খরচ হয়, ছাত্রছাত্রীদের থেকে সেই টাকাই নেওয়া হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা যা-ই বলুন না কেন, টাকার বিনিময়ে পুরোনো প্রশ্নপত্র বিক্রি করাকে ভাল চোখে দেখছেন না যাদবপুরের কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহামঞ্জু বসু এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, “তদন্ত করা হবে।” তাঁর প্রশ্ন, প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের টাকা দিয়ে কেন পুরনো প্রশ্নপত্র কিনতে হবে? তাঁর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই বিগত বছরের মডেল প্রশ্নপত্র পেয়ে যাবে পড়ুয়ারা। প্রসঙ্গত, যাদবপুরে স্নাতকোত্তরে প্রবেশিকা শুরু হচ্ছে ১৭ জুন এবং স্নাতকে প্রবেশিকা শুরু হবে ২৪ জুন থেকে।
কলেজে-কলেজে স্নাতকে আসন্ন ভরতি-পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে চলতি বছর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। গত বছর স্নাতকে ভরতি ঘিরে নানা অভিযোগ উঠেছিল। বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ ছিল, ভরতির তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও কলেজে কাউন্সেলিং বা ভেরিফিকেশনে গিয়েই সিন্ডিকেটের দাদাদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। বাড়তি টাকা চেয়ে জোরজুলুম চলছে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষা দপ্তর স্নাতক-স্নাতকোত্তরে সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভরতির পদ্ধতি সংক্রান্ত নির্দেশিকাও জারি করেছে। দিন পনেরো আগে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষদের নিয়ে ভরতি সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব আর এস শুক্লা বলেন, ভরতি-পর্বে কোনও পড়ুয়ারই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজিরার প্রয়োজন নেই। ভেরিফিকেশন হবে ক্লাস শুরুর পরে। তখন গরমিল ধরা পড়লে ভরতি বাতিল হবে। মেধা তালিকা প্রকাশের পর কলেজে গিয়ে কাউন্সেলিং ও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বন্ধ হচ্ছে। মেধা তালিকার ভিত্তিতে সরাসরি ব্যাংকে টাকা জমা দিলেই সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ভরতি হওয়া যাবে। এক্ষেত্রে কলেজে ভরতির যোগ্য কারা, চিঠি, ই-মেল বা টেলিফোনে সেই তথ্য জানাতে বাধ্য থাকবে কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট ব্যাংকে ক্যাশে বা ই-পেমেন্টে টাকা জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে ভেরিফিকেশনের যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে রাখবে কলেজ। আবেদনের সঙ্গে যাবতীয় নথি আপলোড করতে হবে প্রার্থীদেরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.