রমেন দাস: এবার পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়েও বিতর্ক যাদবপুরে। সাংবাদিকতা বিভাগের পরীক্ষার খাতায় বিস্তর গরমিলের অভিযোগ উঠল বিশ্ববিদ্যালয়ে। দাবি, কমপক্ষে ৫০ জন পড়ুয়ার খাতা না দেখেই নাকি নম্বর দিয়েছেন এক অধ্যাপক। যা ধরা পড়েছে ওই খাতাগুলি পুনর্মূল্যায়নের সময়! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) গণজ্ঞাপন এবং সাংবাদিকতা বিভাগের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুনর্মূল্যায়ন থেকে শুরু করে ফের ফলপ্রকাশ, সব দিক ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উপাচার্যের কাছে একাধিক ডেপুটেশনও জমা পড়েছে। অভিযুক্ত অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক সংগঠন ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছেন কেউ কেউ।
ঠিক কী ঘটেছে?
অভিযোগ, সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমেস্টারের কমপক্ষে ৫০ জন পড়ুয়ার খাতাই দেখা হয়নি। মিডিয়া এথিক্স এবং ল’ পেপারের একাধিক খাতা না দেখেই নম্বর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর যে কারণে, একের পর এক পড়ুয়া ওই বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন বলে দাবি। যদিও ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হলেও সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসে। এর পরই তোলপাড় শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়াময় সাত্যকি ভট্টাচার্যের দাবি, “ছাত্ররা খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করার পর আমার নজরে আসে কিছু বিষয়। এরপর আমি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে বিষয়টি জানাই। বিভাগীয় প্রধানের নজরে আনি।” ওই বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক পার্থসারথি চক্রবর্তী জানান, “ঘটনাটি জানতে পেরেছি। গুরুতর অভিযোগ। উপাচার্য নিজে দেখছেন সবটা। উপযুক্ত পদক্ষেপ অবশ্যই হবে। গাফিলতি তো ছিলই, না হলে এভাবে অভিযোগ উঠবে কেন! খুবই খারাপ বিষয়।”
বর্তমানে ওই বিভাগের তৃতীয় সেমেস্টারের ছাত্র প্রসেনজিৎ ঘোষ। তাঁদের সঙ্গেই এমন ঘটেছে বলে দাবি। তিনি বলেন, “আমরাও বিষয়টি বুঝতে পারিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে জানতে পারি। অভিযোগ করেছি। এভাবে অনেকেই ভুক্তভোগী। বহু বন্ধু সাপ্লি পেয়েছে। রিভিউয়ের আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন।”
সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে এক অধ্যাপকের নাম। যদিও তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’। তিনি জানান, “আমি জানি না, আমার নাম কেন উঠছে। যদি কিছু ঘটে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাকে কর্তৃপক্ষ কিছু জানতে চাইলে লিখিত জানাব। কোনওভাবেই সংবাদমাধ্যমে বলব না।”
যদিও এই বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি কিশলয় রায়। তাঁর দাবি, “ওই বিভাগে আজ নয়, দিনের পর দিন বহু ঘটনা ঘটছে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এসেছে। আমি নিশ্চিত বলছি, এই বিষয়ে শিক্ষক সংগঠন জুটা চুপ তার কারণ, ওই অধ্যাপক তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সিপিএমের লোক!”
তবে এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন জুটা-র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থপ্রতিম রায়। তিনি জানান, “কোনও পরীক্ষার খাতা দেখা নিয়ে যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষকের কাছে জানতে চাইবেন এবং সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক তার উত্তর দেবেন। আর দরকারে কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার খাতার পুনর্মূল্যায়ন করবেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত এবং রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর সঙ্গে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে, তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.