ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি’র সমর্থনে বিজেপির সভা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকাকে হেনস্তার অভিযোগ। সোমবার সন্ধেবেলা সেই ঘটনা ঘিরে শোরগোল পড়ে গেল যাদবপুপর এইট বি বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কার্যত ধুন্ধুমার বেঁধে গেল বিজেপি কর্মী, সমর্থকদের। যা সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পরে যাদবপুর থানায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন যাদবপুরের নিগৃহীতা অধ্যাপিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা।
ঘটনা সোমবার সন্ধেবেলার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এইট বি বাসস্ট্যান্ডে ‘শ্যামাপ্রসাদ স্মারক সমিতি’র নামে NRC এবং CAA’র পক্ষে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছিল বিজেপির তরফে। সেখানে বক্তব্য পেশের সময় CAA বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের সঙ্গে এক বক্তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী মন্তব্যও শুরু করেন। তিনি বলেন, ”উলটোদিকের যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সবাই বিধর্মী, বেইমানের দল। এরা দিন শুরু করে দেশদ্রোহী স্লোগান আর ‘আল্লাহু আকবর’ দিয়ে।”
সেই সময় সামনের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের অধ্যাপিকা দয়িতা মজুমদার। তিনি এলাকারই স্থানীয় বাসিন্দা। বিজেপি নেতার এই মন্তব্য শুনে তিনি মঞ্চের সামনে এগিয়ে যান এবং জোর গলায় এর প্রতিবাদ করে বলেন – ‘মিথ্যে কথা’। অভিযোগ, এই প্রতিবাদ শুনে সভাস্থলে উপস্থিত বিজেপির মহিলা বাহিনী ওনাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করতে শুরু করেন। বাকিরাও তাঁদের সঙ্গে দেন।
অধ্যাপিকাকে এভাবে হেনস্তা হতে দেখে তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান যাদবপুরেরই দুই ছাত্র। তাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনাস্থলে যান অন্যান্য ছাত্রছাত্রী এবং বামপন্থী সংগঠনের সদস্যরা। তখনও বিজেপির সভামঞ্চে রীতিমত ‘হেট স্পিচ’ চলছিল। দয়িতা মজুমদারকে উদ্ধার করা নিয়ে দু’পক্ষের হাতাহাতি বেঁধে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যারিকেড করে দেয় সভাস্থলের চারপাশে। যাদবপুরের পড়ুয়ারা দোষীদের তৎপরতার সঙ্গে গ্রেপ্তারির দাবি তুলতে থাকেন। পুলিশ তাঁদের কথায় গুরুত্ব না দিলে ব্যারিকেড ভেঙে তাঁরা এগিয়ে যান। আধঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মঞ্চ ভেঙে, সভাস্থল ছত্রাখান হয়ে যায়। এই সুযোগে চম্পট দেয় হামলাকারীরা। এরপর যাদবপুর থানা ঘিরে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখান, নিগৃহীতা অধ্যাপিকা দয়িতা মজুমদার এফআইআর দায়ের করেন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ আশ্বাস দেয় যে দ্রুতই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। যদিও এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তারির কোনও খবর নেই।
এর প্রতিবাদে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদক শমীক লাহিড়ি মঙ্গলবার বিকেলে বলেছেন, ”মৌলবাদীদের চরিত্র এক। জঙ্গি সংগঠনগুলি যে কাজ করে, এই গেরুয়া বাহিনীও সেই কাজই করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখার জন্য এসএফআই নেতৃত্বকে বলব, ধারাবাহিক কর্মসূচি নিক। শিক্ষা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখুক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.