Advertisement
Advertisement

Breaking News

Jadavpur University

শব্দ-স্পর্শে ‘পথের পাঁচালী,’ দৃষ্টিহীনদের বিনোদনে তাক লাগালেন যাদবপুরের ছাত্র

দৃষ্টিহীনদের বিনোদন! ইতিহাস সৃষ্টি যাদবপুরের পড়ুয়ার।

Jadavpur University: A student creates a unique audio description of ‘Pather Panchali’ for the visually impaired during their studies
Published by: Sangbad Pratidin Video Team
  • Posted:April 2, 2025 10:48 pm
  • Updated:April 2, 2025 11:58 pm  

রমেন দাস: চোখে দেখে না, আবার বিনোদন! তথাকথিত সমাজের একটা বড় অংশের শত শত অভিযোগের মধ্যেই এবার তাক লাগালেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আর্য মৈত্র। বর্তমানে স্নাতকোত্তর চতুর্থ সেমিস্টারে পাঠরত এই ছাত্র তৈরি করেছেন ‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রের শ্রাব্য বিবরণী বা অডিও ডেসক্রিপশন। যার মাধ্যমে দৃষ্টিহীনরা ওই সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ শুনবেন স্পষ্টভাবে। ‘পথের পাঁচালী’র প্রত্যেকটি ক্ষেত্র অনুভবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এই শ্রাব্য বিবরণী।

ঠিক কী এই বিষয়টি? আর্য মৈত্র বলছেন, ‘‘ধরা যাক, আপনি কোনও সিনেমা দেখছেন। সাইলেন্ট মুভি না হলে সেই সিনেমা বা চলচ্চিত্রের সংলাপ শোনা যায়। তবে সবক্ষেত্রে তো সংলাপ থাকে না। এক-একটি চরিত্র, তাঁদের অভিব্যক্তি। কিছু না বলেও তাঁদের চারিত্রিক প্রকাশ। এসব কিন্তু কোনও ভাবেই অনুভব করতে বা বুঝতে পারেন না দৃষ্টিহীনরা। এই শ্রাব্য বিবরণী এটাকে গুরুত্ব দিয়েই বানিয়েছি। যেখানে সমস্ত কিছু, সংলাপের বাইরে যা যা, সব ধারা বিবরণীর মতো শুনে অনুভব করতে বা বুঝতে পারবেন দৃষ্টিহীনরা।’’

Advertisement

অর্থাৎ না দেখা অনেক কিছু, অধরা বহুকে যেন স্পর্শ করবেন ওঁরা! দৃষ্টিহীনদের জন্য এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ঈশান চক্রবর্তী। ‘ডিজবিলিটি ইন ইন্ডিয়ান লিটারেচার’ কোর্সের শিক্ষক তিনিই। এই প্রজেক্টটি ওই কোর্সের অন্তর্গত একটি কাজ। তৃতীয় সেমিস্টারে পড়াকালীন এই প্রজেক্টের কাজ করেছেন আর্য। আগেও এই কোর্সের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডমেড ব্রেইল ম্যাপ তৈরি করে রেকর্ড গড়েন দুই পড়ুয়া। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে ঈশান চক্রবর্তী জানান, “প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের জন্য ভাতা থেকে শুরু করে গণপরিবহনে টিকিটে ছাড়, তাঁদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হলেও বিনোদনের অধিকার নিয়ে আলোচনা প্রায় নেই! আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের সবসময় তাঁদের অধিকারের কথা বলি। ক্লাসে পড়ানোর সময় সেই অধিকারের কথা বলতে গিয়ে, প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের বিনোদনের অধিকারের কথাও উঠে আসে। সবকিছু পাওয়ার অধিকার থাকলেও অন্য সবার মতো ওঁদের বিনোদনের অধিকারও রয়েছে, এই বিষয়টিও বুঝতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওই ছাত্র অর্থাৎ আর্য মৈত্র দৃষ্টিহীনদের জন্য এমন একটি শ্রাব্য বিবরণী করতে চান, আমাকে এসে তিনি একথা বলেন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন আর্য। পথের পাঁচালী-র কোনও সংলাপে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে এই বিবরণী বা ডেসক্রিপশন তৈরি হয়েছে। যা দৃষ্টিহীনদের তো বটেই সার্বিকভাবে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের বিনোদন-স্পর্শে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেই আমার মনেহয়।’’

কালজয়ী ছবির অপু-দুর্গার কাশবন পেরিয়ে ট্রেন দেখা। অথবা সর্বজয়ার লড়াইয়ের টুকরো টুকরো প্রকাশ। অপুর চুল আঁচড়ে দেওয়া দুর্গার। সর্বজয়ার নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে থাকা। আবার দুই ভাই-বোনের বাঁশবাগানের সেই দৃশ্য। পিসির আচমকা মৃত্যু! হতভম্ব দুর্গা! ছবিজুড়ে বহু সংলাপের সঙ্গে সঙ্গেই এক-একটি অভিব্যক্তি যেন গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে বারবার। কয়েক সেকেন্ড ধরে নেপথ্য মিউজিকের আবহে সেই অভিব্যক্তিই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সংলাপের বাইরের এই প্রকাশ প্রায় অধরাই থেকে যায় দৃষ্টিহীনদের কাছে। এবার এমন এক শ্রাব্য বিবরণী সেই অধরাকেই বিলুপ্ত করবে বলেই বলছেন স্রষ্টা।

প্রসঙ্গত, আগামী ৪ এপ্রিল বিকেল ৩টেয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী ভবনের বিবেকানন্দ হলে দেখানো হবে শ্রাব্য বিবরণী সমেত ‘পথের পাঁচালী’।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement