Advertisement
Advertisement
Jadavpur University Student Death

যাদবপুর: মৃত্যুর আগে কোন নরক যন্ত্রণায় ছিলেন ছাত্র! বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টেই উঠে এল ভয়াবহ তথ্য

একটি মৃত্যুতে জড়িয়ে ১৩৬ জন! কী বলছে ওই রিপোর্ট?

Jadavpur Student Death: Varsity probe committee submits report | Sangbad Pratidin
Published by: Sangbad Pratidin Video Team
  • Posted:September 18, 2023 7:19 pm
  • Updated:September 18, 2023 9:11 pm  

রমেন দাস: যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে দেশজুড়ে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে উঠে আসে খুনের অভিযোগও। বাংলা বিভাগের নবাগত ছাত্রের পরিবার দাবি করে, ‘খুন হয়েছেন তাঁদের ছেলে’। কিন্তু ওই ছাত্রের মৃত্যুর আসল কারণ কী?

পুলিশি তদন্তে একাধিক সম্ভাবনা উঠে আসার পরেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University) অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্টেও উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ হলেও সূত্রের দাবি, ওই রিপোর্টেই রয়েছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য!

Advertisement

জানা গিয়েছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ১৫তম বৈঠকের পর একটি রিপোর্ট পেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। যেখানে প্রায় শতাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে নানারকমের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। এক হস্টেল সুপারকে সাসপেন্ড থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলের এক নিরাপত্তারক্ষী। সর্বত্র গাফিলতির কথা উঠে এসেছে ওই চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে।

সূত্রের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ওই তদন্ত কমিটি বলছে, নদিয়ার (Nadia) মৃত ছাত্রের (JU Student Death) সঙ্গে মেইন হস্টেলে (Main Hostel) একাধিক দিন ধরে চলেছিল মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন। দাবি, বেশ কয়েক জন মিলে ‘ভয়-সন্ত্রাসে’র পরিবেশ তৈরি করেছিল মেইন হস্টেলে। যার কোপ পড়েছিল নবাগত ওই ছাত্রের উপরেও। দাবি, ওই ছাত্রকে নগ্ন করে অশালীন কাজ করানোর অভিযোগও পরোক্ষে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে ওই রিপোর্টে। হস্টেলের কিছু সিনিয়রদের নেওয়া ‘ইন্ট্রো’ থেকে শুরু করে অশ্রাব্য গালিগালাজ দিতে বাধ্য করা, এমনকী ওই সিনিয়রদের কথা না শুনলে বেধড়ক মারধরের কথাও জানানো হয়েছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির রিপোর্টেই! ওই রাতে, নদিয়ার ছাত্রকে নগ্ন হতেও বাধ্য করা হয়েছিল বলে দাবি।

 

[আরও পড়ুন: ‘বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে সম মনোভাবাপন্ন দলকে স্বাগত’, দিল্লি যাওয়ার আগে ফের ডাক অভিষেকের ]

জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রের মৃত্যুর আগের রাতে তাঁর আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অভিযুক্ত এক প্রাক্তন ছাত্রের বিরুদ্ধে সেখানেই উঠেছে অভিযোগ। ওই ছাত্রের সঙ্গেই একই ঘরে থাকছিলেন বাংলা বিভাগের ওই নবাগত ছাত্র। দাবি, ৯ আগস্ট রাতে একাধিক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয় বগুলার বাসিন্দাকে। শুধু তাই-ই নয়, বাংলা বিভাগের একটি অনুষ্ঠান থেকে একদিন মাঝপথে বেরিয়েও আসেন ওই ছাত্র। মৃত্যুর আগের দিনগুলোতে প্রচণ্ড ভয়ে ভয়ে থাকছিলেন তিনি, এমন দাবিও করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

সূত্রের দাবি, অভ্যন্তরীণ ওই রিপোর্টে ছাত্রের মৃত্যুর কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে একাধিক বিষয়। যার মধ্যে অন্যতম হল, খুনের সম্ভাবনা অথবা মৃত্যুর পথে এগোতে বাধ্য করা। যা ওই রিপোর্টের ২০ নম্বর পাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই দিন শুধু নয়, ওই ছাত্রের সঙ্গে যে কয়েক দিন ধরেই ভয়ঙ্কর মানসিক নির্যাতন চলছিল, তা-ও স্বীকার করা হয়েছে রিপোর্টে।

ওই ছাত্রের মৃত্যুর আগে একদিন আর কয়েক জন সহপাঠীর সঙ্গে সে দক্ষিণ কলকাতার এক জনপ্রিয় শপিং মলে ঘুরতেও যান। সেদিন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত এক প্রাক্তন ছাত্র। যাঁকে দেখেই নাকি ভয় পাচ্ছিলেন ওই ছাত্র। মৃত্যুর আগের রাতেও বাড়ির কথা বলেছিলেন তিনি।

অসহনীয় অত্যাচারের কবলে পড়েই মৃত্যু? যৌন হয়রানির প্রশ্নের মধ্যেই ওই কমিটির ৪৬ পাতার রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে, অত্যাচারের ঘটনায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে যুক্তদের শাস্তিরও। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে একাধিক বর্তমান ও প্রাক্তন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার। ৬ জন প্রাক্তন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে না এবং হস্টেল থেকে আজীবনের জন্য বের করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে ওই কমিটি। এর সঙ্গেই ওই প্রাক্তনীদের বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করার কথাও বলেছে কমিটি। ৪ জন বর্তমান ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের কথাও বলেছে কমিটি। তাঁদের বিরুদ্ধেও এফআইয়ের কথা বলেছেন ওই কমিটির সদস্যরা।

সূত্রের দাবি, এছাড়াও ৫ বর্তমান ছাত্রকে তাঁদের পড়াশোনার ৪টি সেমিস্টার থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে। একই ভাবে ১১ জন ছাত্রকে ২টি সেমিস্টার থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে কমিটি। ১৫ জন ছাত্রকে ১টি সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কারের প্রস্তাব দিয়েছে অভ্যন্তরীণ ওই কমিটি।

৯৫ জন ছাত্রকে যাদবপুরের মেইন হস্টেল থেকে পাকাপাকিভাবে বের করে দেওয়ার নিদান দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। এর সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি ছাত্র সংগঠনের এক প্রাক্তন ‘প্রভাবশালী’ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আজীবন ঢুকতে বারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গেই বারাসতের বাসিন্দা আরও এক নেতা-সহ দু’জনকে পড়াশোনা শেষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। এর সঙ্গেই প্রায় ২৫ জন ছাত্রকে অবিলম্বে মেইন হস্টেল ছাড়তেও বলেছে কমিটি। প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে ‘ভাইরাল’ চিঠিতে নাম থাকা বাংলা বিভাগের এক ছাত্রকেও ওই বিভাগের নবীনবরণ সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠানে আজীবন যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে কমিটি।

[আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোয় রাজ্যের ক্লাবগুলিকে অনুদান, ‘খয়রাতি কেন?’, হাই কোর্টে ফের মামলা]

কিন্তু সমস্তটাই প্রস্তাব আকারে রেখেছে ওই কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এর পরের কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকে এই সুপারিশই পেতে পারে চূড়ান্ত অনুমোদন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি সূত্রের দাবি, এই রিপোর্ট নিয়েও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। কেন আরও কঠিন ব্যবস্থা নয়, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। উল্লেখ্য, যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ওই কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে এর মধ্যে অনেকেই বর্তমানে জেলবন্দি। তাঁদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সম্পর্ক ছিন্ন তো বটেই, কমিটির সুপারিশ মেনে বাকি ক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে কর্তৃপক্ষ, দাবি করা হচ্ছে এমনও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement