ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রামের সামনে দাঁড় করানো হল বিষ্ণুর আরেক অবতার কৃষ্ণকে। অত্যন্ত কম সময়ে মাথা তুলেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি। কিন্তু রামমন্দির নিয়ে এত টালবাহানা কেন? কেন লাগাতার প্রচার করে পাঁচ বছরেও সে মন্দির নির্মাণ করতে পারেনি বিজেপি। শুধু ভোটের সময় রাজনীতি? অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর খুব কম সময়ে মায়াপুরে ইসকনের নতুন ক্যাম্পাস শহর গড়ে উঠেছে তাঁর হাত ধরে। তবে হিন্দুধর্মের আসল পৃষ্ঠপোষক কে?
তৃণমূলের প্রচারে বারবার ঘুরেফিরে আসছে এসব প্রশ্ন। এবারে আসরে নামল ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ। তাদের নতুন মন্দির ক্যাম্পাস নির্মাণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কী ভূমিকা ছিল, তাকে সামনে রেখে লোকসভা নির্বাচনে বৈষ্ণব-সহ সমস্ত ভোটারকুলকে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থনে ভোটদানের আবেদন করেছে ইসকন। এর মধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। চলছে তাকে ঘিরে লাগাতার প্রচার। ভাগীরথীর পূর্ব পাড় বরাবর মায়াপুরের জনপ্রিয় মন্দির। শ্রীধামে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীচৈতন্যের এই লীলাক্ষেত্র বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রের আকরভূমি। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই আন্তর্জাতিক মানের এক শহর তৈরি করতে চেয়েছিল ইসকন। যেখানে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিভাবে আশ্রয় দেওয়া যাবে বিশ্বের অসংখ্য শিষ্যকে। যার জন্য আরও বড় আকারে একটি মন্দির নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল। সেখানে থাকবে উপাসনাস্থল। হিন্দু ভাবধারার বিশ্বজনীন প্রেমের একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে এই মন্দির। বসতি গড়বেন উপাসকরা। কিন্তু তার জন্য একসঙ্গে প্রয়োজন ছিল অন্তত ২০০ একর জমির।
[আরও পড়ুন: হাতিয়ার ‘বর্ণপরিচয়’, অভিনব ছড়া তৈরি করে বিজেপিকে আক্রমণ তৃণমূলের]
বহু দশকের চেষ্টাতেও তা সম্ভব হচ্ছিল না। তাঁদের কথায়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই নিয়ে দরবার করতেই উদ্যোগ নিলেন তিনি। শুরু হল নির্মাণকাজ। নতুন মন্দির ক্যাম্পাস তৈরির জন্য মমতার ল্যান্ড সিলিং বা জমির ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার আইন সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে। এছাড়া ইসকনকে বিভিন্ন কর মকুব, এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ একাধিক সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে ইসকনের দাবির চেয়ে অনেক বেশি, প্রায় সাড়ে সাতশো একর জমি দেওয়া হয়েছে এই নতুন ক্যাম্পাসের জন্য। এর পর আর কোথাও এতটুকু সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি। গোটা শহর নিয়ে মাথা তুলেছে নতুন ইসকন মন্দির। বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রতীক হয়ে উঠেছে এই মন্দির। অত্যন্ত কম সময়ে বিপুল পরিশ্রমে মায়াপুরে এমন দৃষ্টিনন্দন মন্দির নির্মাণ করা গেলে কেন পাঁচ বছরেও রাম মন্দির নির্মাণ করতে পারল না কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ভোট এলেই ধর্মের রাজনীতি করে বিজেপি। রাম মন্দিরের হুজুগ তোলে। আসলে রাম মন্দির তারা বানাতেই চায় না। স্রেফ ধর্মের রাজনীতির হাতিয়ার করে রাখতে চায় রামকে। সেই পর্বেই শ্রীধামে মায়াপুরের মন্দির নির্মাণের ইতিহাস জানিয়ে, তার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের প্রশংসা করে এবার ভোটের আসরে নেমেছে ইসকন। একটি ভিডিও তৈরি করে সরাসরি আবেদন করা হয়েছে মমতার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য। বিজেপির হিন্দুত্বের তাসের মোকাবিলা করবে তৃণমূল। তার সঙ্গে মায়াপুরের নবরূপ নির্মাণের এই ভিডিওটিকে সামনে রাখবে ইসকন। জোর দেওয়া হবে তার প্রচারে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী বিজেপি যে ধর্মকে ব্যবহার করছে, সেটা মানুষের কাছে স্পষ্ট। আর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শুধু মায়াপুর নয়, দক্ষিণেশ্বর, তারাপীঠ, তারকেশ্বর মন্দিরের কীরূপ সংস্কার করেছেন তা-ও মানুষ জানে। এবার বিজেপির সেই মিথ্যাচারের মুখোশটাই টেনে খোলা হবে।”
[আরও পড়ুন: শতাব্দী এক্সপ্রেসে চায়ের কাপে ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’, বিতর্কে বিজেপি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.