শুভঙ্কর বসু: নেতাজি কী এখনও বেঁচে আছেন? থাকলে কোথায়, কীভাবে আছেন? নাকি মৃত? মারা গিয়ে থাকলে কোথায়, কখন, কীভাবে তাঁর মৃত্যু হয়েছে? শুধু বাঙালির নয়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে (Nataji Subhas Chandra Bose) নিয়ে তামাম দুনিয়ার এই চিরন্তন প্রশ্ন ফের উসকে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এক জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে সোমবার হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে উপরোক্ত প্রশ্নগুলির পরিষ্কার জবাব চেয়েছে। আদালতের নির্দেশ, নেতাজির রহস্যময় অন্তর্ধান সংক্রান্ত যত তথ্য কেন্দ্রের হাতে আছে, আগামী দু’মাসের মধ্যে হলফনামার আকারে সেগুলি হাই কোর্টের কাছে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি কারেন্সি নোটে নেতাজির ছবি ব্যবহার করা যায় কিনা, সেসম্পর্কেও কেন্দ্রের মতামত জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট।
নেতাজি জীবিত না মৃত, তা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। রহস্য ভেদ করতে একাধিক কমিশন গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কোনও সরকার এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি। ১৯৪৫ সালের তাইহোকু বিমান দুর্ঘনায় তাঁর আদৌ মৃত্যু হয়েছে কি না, সে প্রশ্নেরও চূড়ান্ত মীমাংসা হয়নি। সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশ ওই বিতর্কে নতুন মাত্রা জুড়ল বলে আইনি মহলের অভিমত।
ঘটনার মূলে হরেন বাগচী বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির দায়ের করা মামলা। তাঁর আবেদন ছিল, একাধিক জমানার কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিংবা অমজনতা সকলেই নেতাজি বন্দনায় ব্রতী হলেও তিনি জীবিত না মৃত, তা নিয়ে কোনও সরকারই কোনও তথ্য প্রকাশ করেনি। এছাড়াও নেতাজি সংক্রান্ত কতগুলি ফাইল এখনও প্রকাশিত হয়েছে। অপ্রকাশিত ফাইলের সংখ্যাই বা কত জানতে চেয়েছেন আবেদনকারী। পাশাপাশি মামলায় হরেনবাবুর দাবি, মহাত্মা গান্ধীর মতই মতোই নেতাজির ছবিও ভারতীয় নোটে ব্যবহার করা যায় কি না, সে বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের মতামত জানতে চেয়েছেন তিনি। প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে এনিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় চান সলিসিটর জেনারেল। তাঁর আরজি মেনে আট সপ্তাহের মধ্যে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর-সহ হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
যদিও নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য ভেদে একাধিক তদন্তকারী কমিশন গঠিত হয়েছে। এনিয়ে শেষ তদন্ত কমিশন ছিল ‘মুখার্জি কমিশন’। তার আগে গঠিত ‘খোসলা কমিশন’ ও ‘শাহনওয়াজ কমিশন’ জানিয়েছিল তাইহোকুর বিমান দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন নেতাজি। কিন্তু মনোজ কুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন মুখার্জি কমিশন সেই দাবি নস্যাৎ করে জানিয়ে দেয়, রেনকোজি মন্দিরে রাখা যে চিতাভস্ম সুভাষচন্দ্র বসুর বলে প্রচার করা হয় তা আসলে এক জাপানি সৈনিকের। আরও চমক দিয়ে মুখার্জি কমিশন জানায়, যে তারিখে বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়েছে, সে দিন কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি। যদিও মুখার্জি কমিশনের পর্যবেক্ষণকে মান্যতা দেয়নি তৎকালীন মনমোহন সিং সরকার। ২০০৫ সালে ৮ নভেম্বর মুখার্জি কমিশন চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছিল। কিন্তু ২০০৬ সালের ১৭ মে সংসদে ওই রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা পর তা খারিজ হয়ে যায়।
নেতাজি জীবিত না মৃত, তা নিয়ে ফের জটিলতা দানা বাধে। গত আগস্টে নেতাজির ‘মৃত্যুবার্ষিকী’ হিসাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপি সরকার। সে সময় বিজেপি সাংসদ তথা মন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কের একটি টুইট ঘিরে সমালোচনার হয়। ওই বিতর্কে কংগ্রেসের নামও জড়িয়েছিল। পোখরিয়ালের পর কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও নেতাজিকে নিয়ে টুইট করে ‘মরণোত্তর’ শ্রদ্ধা জানানো হয়। যা নিয়ে রীতিমত হইচই পড়ে যায়। সমালোচনায় সরব হয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস হোক বা বিজেপি- কেন্দ্রের কোনও ক্ষমতাসীন দলই নেতাজির শেষ অবস্থা নিয়ে অনুসন্ধান করেনি। নেতাজি সংক্রান্ত যাবতীয় গোপন নথি প্রকাশ্যে আনার দাবিও জানিয়েছিল তৃণমূল। এবার কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রকে যাবতীয় প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.