সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোটের মুখে কলকাতা পুলিশের কমিশনারের পদ থেকে অনুজ শর্মার অপসারণ এবং সেই জায়গায় রাজেশ কুমারের নিয়োগ নিয়ে জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। রাজেশ কুমারকে কমিশনারের পদে বসানোর পিছনে কেন্দ্রেরই কলকাঠি দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, পুলিশমহলে মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিতি ছিল রাজেশ কুমারের। ২০১৭ সালে মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিতেই সেইসময় রাজ্য সরকার রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে সিআইডির এডিজি পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজেশ কুমারকে। এবার লোকসভা ভোটের মুখে কমিশনের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের কমিশনারের চেয়ারে বসলেন তিনি। এমনটা কেন হল তা মোটামুটি আঁচ করতে পেরেছে এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল।
মুকুল রায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই রাজীব কুমার ছিলেন তাঁর ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি। প্রশাসনিক কাজকর্মে মুকুল রায়ের ছায়াসঙ্গী ছিলেন বলা যেতে পারে। কিন্তু মুকুল বিজেপিতে যোগ দিতেই রাজেশ কুমারকে এডিজি সিআইডির পদ থেকে সরিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এডিজির মতো কম গুরুত্বপূর্ণে পদে পাঠানো হয় তাঁকে। অন্তর্ঘাতের আশঙ্কাতেই রাজ্য সরকারের এহেন পদক্ষেপ ছিল তা আর ভেঙে বলার দরকার পড়ে না। পুলিশ প্রশাসনের কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজেই রাখা হয়নি তখন তাঁকে। ঠিক তেমনই এবার কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদ থেকে অনুজ শর্মাকে সরিয়ে তাঁকে ভোট সংক্রান্ত কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত না রাখার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়ে দিয়েছে কমিশন। একে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখে রদবদল, সরানো হল কলকাতা এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে]
তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এডিজি সিআইডির পদ থেকে বদলির আগে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হিসাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের দায়িত্বভার ছিল তাঁর কাঁধে। অশান্ত পাহাড়ে গুরুংপন্থীদের একের পর এক গ্রেপ্তারি, দার্জিলিংয়ে গুরুংপন্থীদের গুলিতে রাজ্য পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের মৃত্যুর ঘটনা এবং সর্বোপরি জলপাইগুড়িতে শিশুপাচার চক্রের তদন্তও শুরু করেছিলেন রাজেশ কুমার। নবান্ন সূত্রে খবর, সেইসময় তাঁর কাজে বেশ সন্তুষ্টও ছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপর কী এমন হল যে মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিতেই রাজেশ কুমারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল? তখন এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল পুলিশ মহলের অন্দরে। তবে কি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেও আস্থাভাজন হতে পারেননি রাজেশ কুমার?
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের সময় একই কায়দায় কলকাতা পুলিশের কমিশনার পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে সেই জায়গায় সৌমেন মিত্রকে বসায় কমিশন। সেবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সৌমেন মিত্রর ‘নিষ্ঠাপূর্ণ’ কাজে অসন্তুষ্ট হয়েছিল শাসকদল তৃণমূল। কমিশনের প্রতি ‘দায়িত্ববান’ থাকার খেসারতও দিতে হয় সৌমেন মিত্রকে। ভোট মিটতেই তাঁকে সরিয়ে ফের সেই জায়গায় রাজীব কুমারকে ফিরিয়ে আনে রাজ্য সরকার। সৌমেন মিত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। উল্লেখ্য, ফেব্রুয়ারি মাসে রাজীব কুমারের বাংলোয় সিবিআই আধিকারিকদের হানা দেওয়ার ঘটনা, প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ধরনায় বসা, ধরনা মঞ্চে রাজীব কুমার, অনুজ শর্মা, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ পুরকায়স্থ, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র-সহ একাধিক পুলিশকর্তার উপস্থিতি ভাল চোখে নেয়নি কেন্দ্র। তাই শুক্রবার কমিশনের সিদ্ধান্ত যে হওয়ারই ছিল তার আভাস পেয়ে গিয়েছিল পুলিশমহল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
[আরও পড়ুন: ‘পাহাড় রক্ষায় বিজেপিকে হারান’, নির্বাচনী সভায় আহ্বান মমতার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.