কৃষ্ণকুমার দাস: হিমালয়ের গুহায় তপস্যা করা ঋষিদের ব্যবহৃত ‘আয়নিত জল’ এবার করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের অন্যতম হাতিয়ার। মারণ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে কার্যত বিশল্যকরণীর ভূমিকা নেওয়া ‘হাইড্রোজেন ওয়াটার’ (pH মাত্রা ৮.৫) বোতলবন্দি হয়ে যেমন ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে, তেমনই ‘নেগেটিভ আয়ন’ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বসতি থেকে বহুতলে স্প্রে ছড়িয়ে রুখছে COVID-19 সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকদের দাবি, একবার ওই নেগেটিভ আয়ন শরীরে ঢুকলে অন্তত ১৫ দিন জীবাণু সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যাবে। আয়নিত এই জল নিয়মিত খেলে শুধু করোনা সংক্রমণ থেকেই বাঁচা যাবে, তা নয়। ডায়াবেটিস, রক্তচাপজনিত অসুখও কমবে।
প্রশ্ন উঠেছে, COVID-19 ভাইরাস তো মুখ বা নাক দিয়ে শরীরে ঢুকছে, তা হলে এই জল বা আয়ন কিভাবে প্রতিরোধ করছে? প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কলকাতার পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ঘিঞ্জি বস্তিতে এই আয়ন স্প্রে করা সংস্থার ডিরেক্টর সুপ্রিয় কুমার। তাঁর দাবি, “স্প্রে করলে অতিমাত্রার pH ভেঙে আয়ন হয়ে শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিদ্যুৎ গতিতে ঢুকে ক্ষতিকারক ভাইরাস ধংস করছে। আর স্প্রে থেকে সৃষ্ট অক্সিজেন আয়ন রক্তে মিশে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। নাক বা মুখ দিয়ে ঢোকা ভাইরাসের ৯৮ শতাংশ স্প্রে-তে ধংস হবে। আর বাকি ২ শতাংশ ভাইরাস শরীরের ‘ইমিউনিটি’ বৃদ্ধি পাওয়ায় আপনাআপনি মরে যাবে।”
পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম শুক্রবার জানান, “বেলগাছিয়া ও রাজাবাজারের মত অতি সংক্রমণ বস্তিতে নেগেটিভ আয়ন অর্থাৎ ‘অ্যালকালাইন স্প্রে’ করেই করোনার সংক্রমণ রুখে দেওয়া গিয়েছে।” ফিরহাদ হাকিমের ওয়ার্ডের চেতলা লকগেট বসতি ছাড়াও শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে করোনা রোগী ধরা পড়লেই সংলগ্ন এলাকায় স্প্রে করা হয়েছে। সেই এলাকায় নতুন করে আর কোনও COVID-19 আক্রান্ত হয়নি বলে পুরসভা দাবি করেছে। ব্যয়বহুল এই রাসায়নিক তরলটি অবশ্য স্প্রে করার জন্য রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সম্মতি আদায় করতে হয়েছে। সংস্থার রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর গৌতম সেন এদিন জানান,“যে সমস্ত রাসায়নিক ও সামগ্রী ওই ডিটক্সে থাকার কথা বলা আছে তা উপকারী।” আইসিএমআর-এর স্বীকৃতি আদায়ের জন্য জমা কথা স্বীকার করেছেন সংস্থার এমিরেটস চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ মিহির কুমার ভট্টাচার্য। তবে ডাঃ ভট্টাচার্য এদিন বলেন,“ভাইরাস প্রতিরোধে কতটা ভূমিকা নিচ্ছে তা নিয়ে আরও প্রয়োগের তথ্য প্রয়োজন। তবে মানুষের শরীরে pH মাত্রা বাড়িয়ে দিলে এবং অ্যাসিডিটি কমলে অনেক রোগ দূর হয়ে যাবে।”
হিমালয়ের পাথরে মিশে থাকা যে জল ঋষিরা পান করতেন, তাতে মিশ্রিত নানা ধাতব কণা আয়নিত হয়ে শরীরে ঢুকে pH মাত্রা অনেকটাই বাড়িয়ে দিত। হিমালয়ের সেই দূর্মূল্য ধাতুগুলি রাখা হয়েছে এই বোতলের মধ্যে। যেই বোতলে জল ঢুকছে সেই ধাতব মিশে জলের pH মাত্রা ৮.৫ করে দিচ্ছে। যে বা যাঁরা ওই জল খাচ্ছেন, তাঁর শরীরের অ্যাসিডের হার কমছে। বাড়ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। হায়দরাবাদে ল্যাবরেটরিতে প্রায় ৪৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বিরল ধাতবকণা কার্বনাইজড করে বোতলের দেওয়ালে রাখা হচ্ছে। জল ঢুকলেই হাইড্রোজেন আয়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় pH মাত্রা ৮.৫ হচ্ছে।” দামী এই বোতল থেকে সর্বাধিক ২৫০০ লিটার জল pH মাত্রা ৮.৫ করে দিতে পারবে।
নয়া প্রযুক্তিতে দেহে pH মাত্রা বৃদ্ধি ও কালান্তক এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে শরীরে কিছুদিনের জন্য ‘দেওয়াল’ তুলে দেওয়ার ভূমিকা নিচ্ছে এই নেগেটিভ আয়নের স্প্রে। একইসঙ্গে অ্যালকালাইন ও অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনাকে ঠেকিয়ে রাখছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শহরের ঘিঞ্জি বসতিতে আপাতত হাজার হাজার মানুষের শরীরে প্রতিদিনই এই স্প্রে করা হচ্ছে। সোডিয়াম হাইপো ক্লোরাইট স্প্রে করলে মানুষের শরীরে ক্যানসার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু এই নেগেটিভ আয়ন স্প্রে করলে করোনা ভাইরাসের প্রোটিন স্তর ভেঙে COVID-19 মেরে ফেলছে বলে দাবি করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.