অর্ণব আইচ: ভুয়া সিবিআই অফিসারের বউ আসল পুলিশ। আর সেই পুলিশ বউয়ের কাছ থেকে পুলিশি আদবকায়দা শিখেই ভবানীপুরে (Bhabanipur) ব্যবসায়ীর বাড়িতে সিবিআই সেজে ডাকাতি করতে এসেছিল ডাকাতরা। ডাকাতের ‘পুলিশ বউ’কে লালবাজারে (Lalbazar) ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। ধৃতদের দাবি, এই ডাকাতদলের মূল মাথা আসলে কলকাতা পুলিশেরই এক কনস্টেবল। ‘কি পার্সন’ হিসাবে ওই পুলিশকর্মীই সিবিআই সেজে কীভাবে ডাকাতি করতে হবে, সেই পরামর্শ দেন ডাকাতদলের মাথাদের। ওই পুলিশকর্মীকে শনাক্ত করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাঁকেও জেরা করার প্রস্তুতি চলছে। যেহেতু এর আগেও কলকাতায় একাধিক অপরাধ তথা ডাকাতিতে পুলিশ জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে, তাই এই তথ্য হাতে আসার পর পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরের রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের একটি ফ্ল্যাটে চারটি গাড়ি করে এসে হানা দেয় ভুয়া সিবিআই অফিসারদের দল। ফ্ল্যাট থেকে প্রায় নগদ ৫০ লাখ টাকা ও গয়না লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। ওই টাকা ও গয়নার বেশিরভাগই গোয়েন্দা পুলিশ উদ্ধার করেছে। এক ডজন ডাকাতির অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করা হয়। পুলিশের প্রশ্ন ছিল, সিবিআইয়ের আদব কায়দা এই ডাকাতদলের মাথারা শিখল কেমন করে? সেই উত্তর পেতেই ধৃতদের টানা জেরা করে ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য পান গোয়েন্দারা। জানা যায়, দলের এক মাথার স্ত্রী হচ্ছেন মহিলা পুলিশ। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার একটি থানায় কর্মরত। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা দাবি করেছেন যে, তিনিও আসলে প্রতারিত।
নিজেকে সিবিআই অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে ও ভুয়া নথি দেখিয়েই ওই অভিযুক্ত তাঁকে কয়েক বছর আগে বিয়ে করে। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর স্বামী ভুয়া সিবিআই। বিষয়টি নিয়ে সাংসারিক গোলমাল হলেও তিনি সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসেননি। কিন্তু অভিযুক্ত যুবক ডাকাতির ছক কষার আগে পুলিশ বউ ও তাঁর সহকর্মীদের পুলিশি চালচলন ও আদবকায়দা লক্ষ করতে থাকে। তল্লাশি চালানোর সময় পুলিশের আচরণও জেনে নেয় সে। এর পরই সে ডাকাতির ছক কষতে শুরু করে। গোয়েন্দাদের কাছে ওই মহিলা পুলিশকর্মীর দাবি, তাঁর স্বামী যে কোনও অপরাধ সংগঠিত করছেন, তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। বিষয়টি জানারও চেষ্টা করেন তিনি। যদিও স্বামী তাঁর কথা শোনেননি।
ধৃতদের মোবাইল পরীক্ষা করে একটি সন্দেহজনক নম্বর পান গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরেই ধৃতদের জেরা করে তাঁরা জানতে পারেন যে, এই ডাকাতির এক মূল মাথা হচ্ছে কলকাতা পুলিশের এক কর্মী। ওই কনস্টেবল কলকাতা পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে রয়েছেন বলে পুলিশের কাছে খবর। একটি সূত্র থেকে তাঁর সঙ্গে অভিযুক্তদের দু’একজনের পরিচয় হয়। সেই থেকেই ঘনিষ্ঠতা। কীভাবে পুলিশ বা সিবিআই সেজে তল্লাশির নামে লুঠপাট চালানো যেতে পারে, তা নিয়ে রীতিমতো ডাকাতদের ‘প্রশিক্ষণ’ দেন ওই পুলিশকর্মী, এমনই দাবি ধৃতদের। ওই পুলিশকর্মী ডাকাতির ছকও সাজিয়েছেন বলে দাবি করেছে ধৃতরা। বিষয়টি এবার যাচাই করছেন গোয়েন্দারা। ওই পুলিশকর্মীকে জেরা করার পরই এই ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.