গোবিন্দ রায়: স্রেফ ফৌজদারি মামলার অভিযোগ। আর তার জেরেই তিন তিনটে বছর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে তাঁর প্রাপ্য পেনশন থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। পরে হাই কোর্টের হস্তক্ষেপে পেনশন চালু হলেও তিন বছরের বকেয়ার সুদ পাননি তিনি। আদালত তা মিটিয়ে দিতে বললেও, সেই নির্দেশকে জলপাইগুড়ির জেলা শাসকের দপ্তর মান্যতা দেয়নি বলে অভিযোগ। আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় এবার জলপাইগুড়ির তৎকালীন ও বর্তমান জেলা শাসকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করে সশরীর হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল হাই কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের রায় মনে করিয়ে বিচারপতি শেখর ববি শরাফ ও বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, কারও বিরুদ্ধে ফৌজিদারি দণ্ডবিধিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে, তাঁকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এবং সময় মতো তা মিটিয়ে দিতে হবে বলেও মত আদালতের। নির্দেশ, আগামী ১ সেপ্টেম্বর দুপুর ২ টোয় সংশ্লিষ্ট জেলা শাসকদের আদালতে হাজির হয়ে আদালত অবমাননার কারণ দর্শাতে হবে।
মামলাকারীর আইনজীবী সূর্যপ্রসাদ চৌধুরী ও অর্জুন সামন্ত জানান, কুড়ি বছরের বেশি সময় জেলা শাসকের দপ্তরে মামলাকারী স্বপনকুমার সরকার কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবনে তাঁর সার্ভিস রেকর্ডও ভাল ছিল। ২০১১ সালে জুলাই মাসে অবসর নেন তিনি। গোল বাধে এর পরেই। অভিযোগ, তাঁর পেনশন আটকে দেওয়া হয়েছিল। তার পিছনে অবশ্য কারণ দেখানো হয়, সার্ভিসের সময় তাঁর বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা রুজু হয়েছিল। সেই অভিযোগ অবশ্য খারিজ হয়ে যায় নিম্ন আদালতে। মামলায় বেকসুর হন স্বপন। পরে রাজ্যের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।
এদিকে, মামলার গেরোয় পড়ার আগেই অবশ্য তাঁর তিন বছরের বকেয়া পেনশন মিটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আটকে রাখা হয় সুদ। ফের আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। মামলায় ২০১৭ সালে বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার জন্য ৬ মাস সময় নির্ধারণও করে দেয় আদালত। কিন্তু সেই নির্ধারিত সময়ের পরেও বকেয়া না মেটানোয় ২০১৮ সালে ফের আদালত অবমাননার অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। মামলায় তিন বার তলবের পরেও জেলাশাসক তাঁর বক্তব্য জানাননি। কোনও আইনজীবীও তাঁর হয়ে সওয়াল করেননি। এবার দুই জেলাশাসকের বিরুদ্ধেই আদালত অবমাননার রুল ইস্যু করল হাই কোর্ট। দু’জনকেই আদালতে সশরীর হাজির হতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.