ছবি: প্রতীকী।
অভিরূপ দাস: নিতম্বের উপরে মাংসপিণ্ডর সাড়ি। যেন কোমরে বাঁধা পাঁচ কেজির বস্তা। নড়াচড়া তো দূর। বিছানায় পাশ ফিরতেও পারতেন না রোগী। সঙ্গে ছিল অসহ্য যন্ত্রণা। এমন অবস্থায় হাঁটাচলা করা সম্ভব? মৃত্যুকেই ভবিতব্য ভেবেছিলেন মলিনা গোলদার (নাম পরিবর্তিত)। সারাদিন বিছানাতেই শুয়ে থাকতেন বছর ৫২-এর প্রৌঢ়া। এই যন্ত্রণা থেকে তাঁকে উদ্ধার করল কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স (Institute of Neurosciences Kolkata)।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই মহিলার কোমরের পিছনের অংশ থেকে পায়ুদ্বারের মুখ পর্যন্ত ছেয়ে গিয়েছিল চাকা চাকা মাংসপিণ্ড। তার ওজন ৫ কেজির বাটখারার সমান। বিরল এ অসুখের নাম ‘স্যাক্রোকক্সিজিয়াল কর্ডোমা’। স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগও করতে পারতেন না ওই মহিলা। এর আগে তিন তিনবার ওই একই জায়গায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল। চতুর্থবার ফের একই জায়গায় থাবা বসায় টিউমারগুলি। যার মধ্যে ছিল ক্যানসারের কোষ। ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে রোগীকে নিয়ে আসে পরিবার। হাসপাতালের নিউরো সার্জন অমিত কুমার ঘোষের কথায়, “এ অসুখ অত্যন্ত বিরল। প্রতি ১০ হাজারে একজনের শরীরে এ অসুখ দেখা যায়। সাধারণত পুরুষদের শরীরেই বেশি নজরে পরে এই টিউমার।”
রোগীকে যখন হাসপাতালে আনা হয় চমকে যান চিকিৎসকরা। রোগীর এমআরআই করে দেখা যায়, কোমরের স্যাক্রাম আর ককিক্স হাড়কে জরিয়ে বেড়ে উঠেছে টিউমারটা। আর আগে তিনবার অস্ত্রোপচার করা হলেও এবারের টিউমারটা ছিল আরও ভয়ংকর। চিকিৎসকের কথায়, চতুর্থবারের অস্ত্রোপচার আরও মারাত্মক ছিল কারণ মাংসপিণ্ডটা কোমরের পিছন দিকের গ্লুটেয়াস ম্যাক্সিমাস পেশিকে আকড়ে ধরেছিল। ঢুকে পরেছিল প্যারারেকটাল স্পেসেও। অত্যন্ত সন্তপর্ণে অস্ত্রোপচার না করলে চিরদিনের মতো বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারতেন ওই মহিলা। টানা পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন ডা. অমিত কুমার ঘোষ। তাঁকে সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে সহায়তা করেন ডা. চন্দ্রমৌলি। অস্ত্রোপচার শেষে পাঁচ কেজি ওজনের ওই মাংসপিণ্ডটি কেটে বাদ দেওয়া হয়। তার জন্য প্রায় একফুট লম্বা একটি গর্ত হয়ে কোমরের পিছন দিকে। অস্ত্রোপচার করার পরের ভাগে সেই গর্ত ঢাকাই ছিল মূল কাজ। চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি।’
প্লাস্টিক সার্জন হিসেবে সেই অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন ডা. মণীশমুকুল ঘোষ। আপাতত হাঁটতে পারছেন মলিনা। ডা. অমিত কুমার ঘোষ জানিয়েছেন, এমন রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন রোগী মাত্র পাঁচ বছর বেঁচে থাকতে পারেন। ১০ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৩৫ শতাংশর। ওই মহিলারও হয়তো একই জায়গায় আবার টিউমার হতে পারে। তবে উপায়? ডা. ঘোষ জানিয়েছেন, সেই সম্ভাবনা কমানোর জন্যেই রেডিয়েশন চলবে ওই মহিলার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.