ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: শ্বাসরোধ হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হল ২৩ দিনের শিশুকন্যার। পূর্ব কলকাতার (East Kolkata) প্রগতি ময়দানে ঘটেছে এই ঘটনা। প্রাথমিকভাবে পুলিশের মতে, দুর্ঘটনাবশত শিশুটির মুখের উপর বালিশ এসে পড়ে। সেই বালিশ চাপা পড়ে দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় শিশুটির। যদিও এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। গত বছর আনন্দপুরে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনার বেশ কয়েক মাস পর জানা গিয়েছিল, সেটি খুনের ঘটনা। শিশুকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিল মা। সেই কারণে এই শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটিও পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান থানা এলাকার খানাবেড়িয়ার উঁচুপোতা এলাকায় ঘটেছে এই ঘটনা। ২৩ দিনের শিশুটির নাম অনিন্দিতা দাস। হাসপাতালেই জন্ম হয় শিশুটির। হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে নিয়ে মা অপর্ণা দাস উঁচুপোতায় তাঁর বাপের বাড়িতে আসেন। যদিও শিশুকন্যাটির বাবা উত্তম দাস উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা। বছর দশেক আগে উত্তমের সঙ্গে অপর্ণার বিয়ে হয়। উত্তম পেশায় রাজমিস্ত্রি। ওই দম্পতির আট বছরের এক সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান জন্মানোর সময় অপর্ণার ‘সিজার’ হয়। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। অপর্ণা পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে তিনি বাপের বাড়ির শোওয়ার ঘরে শিশুকন্যাটিকে নিয়ে শুয়েছিলেন। একসময় ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেলে ঘুম ভাঙে তাঁর।
এরপর তিনি দেখেন, মেয়ের মুখের উপর পড়ে রয়েছে একটি বালিশ। তিনি বালিশটি মুখ থেকে সরিয়ে দেন। শিশুটি নড়াচড়া করছিল না। প্রথমে তিনি মনে করেছিলেন যে, শিশুটি ঘুমোচ্ছে। তাই ঘুম থেকে উঠে তিনি নিজের কাজকর্ম করছিলেন। কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে শিশুটি খাবার জন্য না কাঁদলে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি শিশুটিকে খাওয়ানোর জন্য কোলে তুলে নেন। কিন্তু দেখেন, শিশুটি অচেতন। তখনই তিনি বাড়ির লোকেদের ডাকাডাকি করতে থাকেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরা বুঝতে পারেন যে, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। ক্রমে এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকেই খবর পান প্রগতি ময়দান থানার আধিকারিকরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
পরিবারের লোকেদের দাবি, যেখানে শিশুটি ঘুমোচ্ছিল, তার মাথার কাছেই বেশ কয়েকটি বালিশ একটির উপর অন্য একটি সাজিয়ে রাখা ছিল। একটি বালিশ উপর থেকে শিশুটির মুখের উপর পড়ে যায়। তার ফলেই তার দমবন্ধ হয়ে যায়। যখন মা শিশুর মুখের উপর থেকে বালিশটি সরান, ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, তাঁরা খবর পাওয়ার আগে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাড়িতে পড়ে ছিল শিশুটির দেহ। পুলিশের কাছে পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, শিশুটির মৃত্যু হয়েছে জেনেও তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না কী করবেন। তাই বাড়িতেই রেখেছিলেন দেহটি। রবিবার দেহটির ময়নাতদন্ত হয়। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা প্রগতি ময়দান থানায় রুজু হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অন্য কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষে শিশুটির মা ও পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.