অর্ণব আইচ: এভাবেই জঙ্গল কেটে তৈরি হয় রাস্তা। অরুণাচল প্রদেশ আর মণিপুরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শহরের রাস্তার উপর উপড়ে পড়া গাছ সরাল সেনা। যুদ্ধকালীন তৎপরতাই বটে। অস্ত্র বলতে ‘দাও’ যা আসলে কাটারি, ‘খুলারি’ অর্থাৎ কুঠার, গোটা কয়েক চেন করাত, জেসিবি আর ক্রেন। তার সাহায্যে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই কাটা হয়ে যাচ্ছে রাস্তায় পড়ে থাকা মহীরুহ। তা রাস্তার একপাশে সরিয়ে দিচ্ছে জেসিবি। এই ‘কাট অ্যান্ড পুশ’ পদ্ধতিতেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাটা হয়ে যাবে আমফানে পড়ে থাকা গাছ। এমনই দাবি সেনাকর্তাদের। এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল থেকে শুরু করার পর রবিবারের মধ্যে অনেকটাই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার কলকাতা পুরসভা যে যে রাস্তা সাফ করতে বলবেন, সেখানেই যাবেন তাঁরা।
রাস্তা সচল করতে ইঞ্জিনিয়ার্স ও ইনফ্যান্ট্রি মিলিয়ে যে পাঁচ কলম সেনা রাস্তায় নেমেছে, তাদের মধ্যে তিনটি কলম রয়েছে কলকাতার বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ ও বেহালায়। এদিন এক সেনা আধিকারিক জানান, শনিবার বিকেলে যখন তাঁরা সাদার্ন এসে পৌঁছন, তখন জায়গাটি তাঁদের ‘জঙ্গল’ বলেই মনে হচ্ছিল। রাস্তায় পরপর উপড়ে পড়া গাছ। কিন্তু তাঁদের কাজ শুরু করতে কোনও অসুবিধা হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার্স-এর এক ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার অফিসার জানান, অরুণাচল, মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা জঙ্গল কেটে রাস্তা তৈরিতে অভ্যস্ত। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের এই কাজ করতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সেনারা কলকাতায় কাজে লাগিয়েছেন।
দক্ষিণ কলকাতায় রাস্তায় নেমেছে কুমায়ুন রেজিমেন্টের সেনারাও। প্রথমেই রাস্তার উপর পড়ে থাকা মোটা গাছের ডাল বৈদ্যুতিক চেন করাত দিয়ে কাটা হচ্ছে। তুলনামূলক ছোট গাছের ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে দু’রকমের ‘দাও’ বা কাটারি দিয়ে। চেন করাতের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘খুলারি’ বা কুঠার। একটি বড় গাছের ডাল জনা দশেক জওয়ান মিলে সহজেই সরিয়ে দিচ্ছেন রাস্তার একপাশে। আবার সেনাদের নিজস্ব ‘জেসিবি’ দিয়ে কেটে ফেলা গাছ ঠেলে দেওয়া হচ্ছে রাস্তার ধারে। এই পদ্ধতির নামই ‘কাট অ্যান্ড পুশ’। পনেরো মিনিটের মধ্যেই গাছ কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে রাস্তা। এক সেনা অফিসার জানান, সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে কুড়িটির উপর বড় বড় গাছ পড়ে ছিল। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই তাঁরা ওই রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। একই অবস্থা বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডেও।
রবিবার যখন লেকের মেনকা সিনেমার কাছ থেকে গাছ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে, শরৎ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা বিভা চট্টোপাধ্যায় সেনাদের বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের রাত থেকেই বড় গাছে আটকে রয়েছে তাঁদের বাড়ির গেট। তাঁর অনুরোধে সেনা কর্মীরা গেটের সামনে থাকা গাছটি সরিয়ে দেন। সংলগ্ন আব্দুল রসুল রোড গাছ পড়ে আটকে গিয়েছিল। এলাকার বাসিন্দাদের অনুরোধে সেই বিশাল গাছ রাস্তা থেকে সেনা সরিয়ে দেয়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে হাততালি দেন বাসিন্দারা।
এদিন বেহালার পর্ণশ্রী থানার অদূরে ঝুলে থাকা একটি গাছ কাটতে অসুবিধা হচ্ছিল সেনা জওয়ানদের। তাঁরা একটি মই নিয়ে উপরে উঠে গাছটি কাটেন। বেহালা, পর্ণশ্রী, বালিগঞ্জ, গড়িয়াহাটের বিভিন্ন অংশে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করেছে সেনা। একটি সেনা টিম গোলপার্ক ও পূর্ণ দাস রোডের উপর পড়ে থাকা বড় গাছ সরানোর পর চলে আসে শরৎ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। গাছ সরানোর পর রবীন্দ্র সরোবর, টালিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে সহজে যান চলাচল করতে পারছে। একই সঙ্গে কাজ করছে এনডিআরএফ ও কলকাতা পুলিশের ডিএমজি। খুব তাড়াতাড়ি শহর যাতে স্বাভাবিক হয়, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.