অর্ণব আইচ: সালটা ১৯৭১। বাংলাদেশের (Bangladesh) ফরিদপুরে ঝোপের মধে্য লুকিয়ে জনাকয়েক মুক্তিযোদ্ধা। সঙ্গে কয়েকজন ভারতীয় সেনা। হঠাৎই কাছে প্রচণ্ড শব্দ করে ফাটল পাক সেনাদের শেল। ভারতীয় সেনাদের আড়ালে থেকে কোনওমতে প্রাণে বাঁচলেন মুক্তিযোদ্ধারা।
সেই শেলের টুকরো এখনও রয়েছে। রয়েছে আরও বহু অস্ত্র, যা ব্যবহার করা হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে (Bangladesh Liberation War)। ৫০ বছর আগে সেগুলি উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতায়। যদিও সর্বসাধারণের সামনে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ভারতীয় সেনাকর্তাদের মতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুই বাংলা তথা দুই দেশের আবেগ। এবার দুই দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা কীভাবে যৌথ লড়াই করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল, তা বিশেষভাবে তুলে ধরতে চায় ভারতীয় সেনা। সেই কারণেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কলকাতায় তৈরি হচ্ছে একটি নতুন মিউজিয়াম। এই মিউজিয়াম তৈরির জন্য দিল্লিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ফোর্ট উইলিয়াম।
সেনাদের বেঙ্গল এরিয়ার এক সেনাকর্তা জানান, ময়দান অঞ্চলে ফোর্ট উইলিয়ামের পলাশি গেটের কাছেই এই নতুন মিউজিয়ামটি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পলাশি গেট লাগোয়া সেনাবাহিনীর নিজস্ব অনেকটাই জমি রয়েছে। তার মধে্য ১.৯ একর জমি নিয়ে তৈরি হচ্ছে এই মিউজিয়াম। এই মিউজিয়াম তৈরির জন্য কত টাকা লাগতে পারে, সেই হিসাবও করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘স্বর্ণিম বিজয় বর্ষ’ পালন করছে ভারতীয় সেনা। তাই এই বছরেই দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে এই নতুন মিউজিয়াম তৈরির প্রস্তাবটি। সাধারণভাবে শহরবাসী ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতর থাকা মিউজিয়াম দেখতে পারেন না। কিন্তু এই নতুন মিউজিয়ামটি ফোর্ট উইলিয়ামের বাইরের অংশে তৈরি হবে। ফলে মিউজিয়ামটি দেখা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজ হবে।
সেনাদের এক কর্তা জানান, ফোর্ট উইলিয়ামের ভিতর একটি মিউজিয়াম রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুক্ত নিয়ে রয়েছে বহু তথ্য ও নথি। রয়েছে বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার হওয়া পাকিস্তানের পতাকা, যা উল্টো করে রাখা আছে মিউজিয়ামে। তা ভারতীয় সেনাদেরই জয়ের প্রতীক। রয়েছে বহু দুর্লভ ছবি ও ১৯৭১ সালে খবরের কাগজের কপি। কিন্তু আরও বহু বস্তু আছে, যেগুলি কোনওদিন সামনে আসেনি। যেমন, ভারতীয় সেনাদের জিম্মায় রয়েছে পাকিস্তানের ছোঁড়া টুকরো হয়ে যাওয়া শেল।
এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহার হওয়া পাক সেনাদের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র, শেল, গোলা ও আরও বেশ কিছু বস্তু উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় ফোর্ট উইলিয়ামে। ওই সময় আঁকশির মতো একটি অস্ত্র যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেগুলি ওই মিউজিয়ামে স্থান পেতে পারে। এ ছাড়াও পাক সেনাকর্তা নিয়াজির গাড়িও যুদ্ধজয়ের ‘ট্রফি’ হিসাবে ঢাকা থেকে চালিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতায়। যুদ্ধে ব্যবহার করা কামান রয়েছে ফোর্ট উইলিয়ামে। সেগুলিও সর্বসাধারণের সামনে তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে ওই নতুন মিউজিয়ামের ভিতর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি নিয়ে ‘লাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ শো হবে। তুলে ধরা হবে ভারতীয় সেনা, শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রামের তথ্য। ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের মানুষের মধে্যই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে এই মিউজিয়াম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.