শুভঙ্কর বসু: ফন্দিটা ছিল জব্বর। কিন্তু ধোপে টিকল না। উলটে গচ্চা গেল গ্যাঁটের কড়ি। সঙ্গে জুটল আদালতের তিরস্কারও! করোনা ভাইরাসের দোহাই দেখিয়ে অতি সাধারণ একটি মামলাকে ‘জরুরি’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন শুভম রায়চৌধুরি নামে এক প্রবাসী ভারতীয়। কিন্তু বিচারপতির নজর এড়ায়নি। এই সংকটের সময় আদালতের মূল্যবান সময় নষ্টের জন্য তাঁকে ১০ হাজার টাকার জরিমানার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।
ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুধু জরুরি বিষয়গুলির শুনানি হচ্ছে হাই কোর্টে। এর মাঝেও ঠিক কোন বিষয়কে ‘জরুরি’ বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন শুভমবাবু? এবং তার যুক্তিই বা কি ছিল? মামলার বয়ান সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে দক্ষিণ শহরতলির এক মহিলার সঙ্গে বিয়ে হয় ইউনাইটেড কিংডমে কর্মরত শুভমবাবুর। কিন্তু বিয়ের পাঁচ দিনের মধ্যেই স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর শারীরিক পরীক্ষায় গুরুতর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। হঠাৎ নয়। ন’বছর আগেই তিনি ওই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবং সেই তথ্য গোপন করে শুভমবাবুর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমন অন্যায় তিনি সহ্য করবেন কেন? তাই বিয়ে ভাঙতে পত্রপাঠ তিনি আলিপুর আদালতে মামলা ঠোকেন। যেটির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি।
এদিকে, শুভমবাবুর বিরুদ্ধে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে হরিদেবপুর থানায় পালটা মামলা করেন তাঁর স্ত্রী। বোঝাই যাচ্ছিল এক রকম প্রতিশোধ নিতে এমন পদক্ষেপ। অগত্যা স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগ বাতিলের দাবিতে গত ফেব্রুয়ারিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন শুভমবাবু। সেই মামলায় তাঁর পক্ষেই রায় দেয় আদালত। বিষয়টি বুঝতে পেরে শুভমবাবুর বিরুদ্ধে কোনও রকম পুলিশি পদক্ষেপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় সাত সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করেন বিচারপতি রাজশেখর মন্থা।
এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু অতি চালাকি করতে গিয়ে গোল বাধল। করোনার দোহাই দেখিয়ে ফের একবার ওই একই আবেদন নিয়ে বিচারপতি মন্থার দ্বারস্থ হন শুভম বাবু। এবং জরুরি শুনানির আবেদন জানান। বিচারপতি মন্থার অবশ্য নজর এড়ায়নি। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানিতে শুভমবাবুর আইনজীবী অজয় রায় চৌধুরির কাছে তিনি জানতে চান, “কিসের ভিত্তিতে এর জরুরি শুনানি চাইছেন?” অজয় বাবু তখন বলেন,”স্ত্রীর অভিযোগের কারণে আমার মক্কেল চরম হতাশায় ভুগছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে এর নিষ্পত্তি করা হোক।” এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে সরকারি আইনজীবী তন্ময়কুমার ঘোষ বলেন, “নিছক হতাশা কোনও জরুরি কারণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
এরপর বিচারপতি মন্থা মামলাকারীর আইনজীবীকে সতর্ক করেন। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। শেষমেষ বিচারপতি বলেন,”এই দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে গোটা সমাজের যেখানে বিপর্যস্ত দশা সে সময় এক ব্যক্তির হতাশা কোনও জরুরি কারণ হতে পারে না।” এরপরই আদালতের মূল্যবান সময় নষ্টের জন্য শুভম রায়চৌধুরিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারপতি মন্থা। জানিয়ে দেন, দু’মাসের মধ্যে স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটিতে জরিমানার অর্থ জমা দিতে হবে। অন্যথায় শুভমবাবুর মূল মামলাটি আপনাআপনি খারিজ হয়ে যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.