সুব্রত বিশ্বাস: দু’দেশের মেলবন্ধন ঘটানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা। আজ সেই মৈত্রী এক্সপ্রেসে বৈদেশিক চুক্তি লঙ্ঘন করে দেদার পাচার হচ্ছে নানা সামগ্রী! বিদেশি শুল্ক না এলেও পকেট ভরছে এক শ্রেণির রেলকর্মী থেকে বিএসএফ, আরপিএফ কর্মীর। শুল্ক দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মৈত্রী এক্সপ্রেস করে বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে জামা-কাপড় থেকে ব্যবহার্য সামগ্রী ও ওষুধ। বেআইনি কাশির সিরাপ থেকে সোনার অলঙ্কার পর্যন্ত। এই সামগ্রী পাচারে যুক্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক চোরাচালানের পান্ডারা। এদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে রেলের এক শ্রেণির কমার্শিয়াল কর্মী, আরপিএফ, বিএসএফ ও জিআরপি-র।
আগাম চুক্তি অনুযায়ী এই সব পণ্য ট্রেনে চড়ে একেবারে নির্দ্ধিধায়। এক যাত্রীর সঙ্গে ৩৫ কিলোর ছাড় থাকলেও পাচারকারীর সামগ্রী থাকে অনেক বেশি। ফলে বাড়তি পণ্যের জন্য ‘ডলারে’ জরিমানা হওয়ার কথা তিন গুণ। কিন্তু, কমার্শিয়াল বাবুদের সঙ্গে সখ্য থাকায় নাম কে ওয়াস্তে জরিমানার স্লিপ কাটা হয়। বাকি মাশুলের হিসাব কষে একটা বড় অঙ্কের টাকা পকেটে চলে যাচ্ছে রেলকর্মী ও বিএসএফ কর্মীদের! এর ফলে একদিকে বৈদেশিক শুল্ক যেমন দেশের ভাঁড়ারে আসছে না, তেমনই ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যাহত হচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। পূর্ব রেলের কমার্শিয়াল বিভাগের কর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মানের কলকাতা স্টেশনে নানা অবৈধ কারবার চলছে এক শ্রেণির আরপিএফ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মীদের মদতে। স্থানীয় আরপিএফ ব্যারাকের পিছনে রেলের শতাধিক আবাসন রয়েছে। যেখানে বৈধ আবাসিকরা থাকেন না। বহিরাগতরাই এই আবাসনে নির্বিঘ্নে বসবাস করছেন। প্রায় ৬০ আবাসন দখল করে রয়েছেন বহিরাগতরা। আরপিএফ ও আইওডব্লু বিভাগের কর্মীরা এই বহিরাগত বাসিন্দাদের থেকে মাসে কোয়ার্টারপিছু তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ। বিষয়টি রেলের আধিকারিকদের অনেকেই জানেন বলেও আবাসিকদের বক্তব্য।
তাঁদের কথায়, আলো ও জল সবই নিয়মিত থাকে এই সব আবাসনে। রেলের আবাসনের এই অপব্যবহারই নয়, একই জায়গায় প্রায় পনেরোটি হোটেল রয়েছে। খাবারের এই হোটেলগুলিতে সংযোগ রয়েছে রেলের বিদ্যুৎ ও জলের। রেলের জায়গায় এই অবৈধ হোটেলের রমরমা শুধুই আরপিএফ ও আইওডব্লুর সঙ্গে সখ্য রেখেই। প্রতি হোটেল থেকে দৈনিক আরপিএফ-এর ‘স্পেশ্যাল’ কর্মী পাণ্ডেজি ৪০০-৫০০ টাকা করে নেয় বলে এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান। পাশাপাশি কলকাতা স্টেশন থেকে যে সব বাস বিভিন্ন রুটে যায় সেগুলিও অবৈধভাবে রাতে কলকাতা স্টেশন চত্বরে পার্কিং করে রাখা হয়। এজন্য আরপিএফ মাসে গাড়িপ্রতি চুক্তি অনুযায়ী টাকা আদায় করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আরপিএফ-এর ঊর্ধ্বতন কর্তারা জানিয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কারণ এটি আন্তর্জাতিক মানের এবং ভিন রাষ্ট্রের লোকজনের আনাগোনার জায়গা। এধরনের অবৈধ কারবার বন্ধ করতে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.