স্টাফ রিপোর্টার: প্রায় নিখরচায় যে পরিষেবা পাওয়ার কথা তার জন্য ৭০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন এক যুবক৷ অবশেষে রোগী সেজে শেখ নাজিম নামে ওই ‘দালাল’ কে পিজি থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ৷
হার্টের অসুখ নিয়ে পিজির সিটিভিএস ওয়ার্ডের পুরুষ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বালিগঞ্জের এক রোগী৷ হার্টের ভালব পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল তাঁর৷ তাড়াতাড়ি অপারেশনের ‘ডেট’ পেতে একে-ওকে ধরছিলেন৷ ওইসময়ই ‘দেবদূত’-এর মতো রোগীর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান শেখ নাজিম৷ বলেন, “পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে অপারেশন, ৭০ হাজার টাকা দিলে দ্রুত সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে৷” বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় রোগীর পরিবার পুলিশকে তা জানায়৷ সেইমতো রবিবার ফাঁদ পাতে পুলিশ৷ বেলা সাড়ে এগরোটা নাগাদ শেখ নাজিম ফের সিটিভিএস ওয়ার্ডে ঢোকে৷ একজন রোগীকে রক্ত এনে দেওয়ার বিনিময়ে টাকা নিচ্ছিল সে৷ ওই সময়ই পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে৷
জানা গিয়েছে, ওই দালাল এমন পরোপকারী ভাবমূর্তি তৈরি করে রেখেছেন যে, এদিন তার গ্রেফতারির খবর চাউর হতে বেশ কয়েকজন রোগী রীতিমতো দুঃখপ্রকাশ করেন৷ বলেন, “টাকা নিলেও ও দারুণ পরিষেবা দিত৷ রক্তের ব্যবস্থা করা থেকে অপারেশনের ‘ডেট’, সবই চুটকিতে করে দিত৷” রোগীদের সিংহভাগ অবশ্য খুশি৷ তাঁদের মত, চিকিৎসকদের সঙ্গে আতাঁত করে দালালরাই পরিষেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছে৷ দালালচক্র শেষ হলে সবাই একইরকম পরিষেবা পাবেন৷
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে কড়া পদক্ষেপ নেয় পিজির রোগী কল্যাণ সমিতি (আরকেএস)৷ রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সমস্ত কর্মী সংগঠনের অফিস৷ বন্ধ করা হয় রোগী সহায়তা কেন্দ্রের নামে চলা অফিসটিও৷ এগুলো থেকেই দালালচক্র অক্সিজেন পেত বলে অভিযোগ৷ পরে আরকেএস বৈঠকে চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের পূর্ত, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পুলিশকে রোগী সেজে দালাল ধরার পরামর্শ দেন৷ মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ৷ বেশ কয়েকজন দালাল ধরা পড়ে৷ এদিনও ধরা পড়ল একজন৷
জানা গিয়েছে, অরূপবাবু নিজেও ছদ্মবেশে একবার পিজির এমার্জেন্সিতে গিয়ে দালাল ধরেছেন৷ দালালরাজ ভাঙতে বেআইনি পার্কিংও বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে পিজিতে৷ কিন্তু ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’ (বিআইএন) নিয়ে সমস্যা চলছিলই৷ অভিযোগ, এখানে আসা বেশিরভাগ রোগী যেহেতু মুমূর্ষু এবং হাঁটাচলা করতে অক্ষম, সেই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির দালাল ট্রলি-হুইলচেয়ার সরবরাহের নামে টাকা তুলছিল৷ রোগী ভর্তি নিয়ে চক্র তো ছিলই, আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে গেলেও তিনশো-চারশো টাকা দালালকে দিতে হত৷ এমআরআই-সিটি স্ক্যানের ডেট পেতেও ধরতে হত ‘দালাল’৷ এমন অভিযোগ অনেকদিন ধরেই আসছিল অরূপবাবুর কাছে৷ তাই, সম্প্রতি আলাদা করে বিআইএন নিয়ে আরকেএস বৈঠক করেন তিনি৷
নির্মীয়মাণ বিল্ডিংগুলির কাজ দ্রুত শেষ করা ও রামঋক হাসপাতালকে বিআইএন-এর অ্যানেক্স হাসপাতাল হিসাবে দ্রুত চালু করা-সহ একধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলে৷ বলা হয়, দ্রুত রামঋকের পরিষেবা চালু করতে হবে৷ প্রতি মাসে আরকেএসের বৈঠক করতে হবে৷ সমিতির যুক্তি, চিকিৎসকরা সমস্যাগুলি তুলে ধরলে স্বাস্থ্য দফতর বা পূর্ত দফতরের সঙ্গে কথা বলে তার সমাধান করে ফেলতে পারবেন চেয়ারম্যান৷ ফলে অভাব-অভিযোগ জমবে না৷ কোথাও কোনও ঘাটতি হলেও তা দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে৷ চিকিৎসকরাও মেনে নিলেন আলাদা করে আরকেএস বৈঠক হলে বিআইএনের অনেক সুবিধা হবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.