গৌতম ব্রহ্ম: শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত করোনা আবহে রাজ্যে মৃত্যু ৫৭ জনের। এর মধ্যে সরাসরি কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। বাকিরা করোনা পজিটিভ হলেও মৃত্যুর কারণ পুরনো কোনও রোগ বা কো-মরবিডিটি। মারণ নোভেল করোনা রোগে দেশের নিরিখে এই মৃত্যুহার যথেষ্টই কম! কিন্তু সেই ‘সামান্য’ হারটাও কমিয়ে আনতে কোভিড রোগীর জন্য রাজ্যে আরও একটি আইসিইউ ইউনিট চালু করার উদ্যোগ নিল স্বাস্থ্য ভবন। ২৪ শয্যার এই আইসিইউ ইউনিটটি চালু হচ্ছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। এতদিন পর্যন্ত কলকাতায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় একটি মাত্র এই ধরনের আইসিইউ ইউনিট ছিল। যেখানে প্রতি বেডের সঙ্গে রয়েছে পৃথক ভেন্টিলেটরের সুবিধা। ১৪ শয্যার এই ইউনিটটি চালু হয়েছে গত সোমবার, এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য কর্তাদের বক্তব্য, করোনা চিকিৎসায় রাজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মূল সমস্যা কেবিনের সংকীর্ণ মাপ। এখানকার একচিলতে কেবিনে জায়গার অভাবে বেডের পাশে ভেন্টিলেশনের যন্ত্রপাতি রাখলে নড়াচড়া করতে পারেন না চিকিৎসক-নার্সরা। তাতে ইনটিউবেশনের পর রোগীর পরিচর্যা করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। সমস্যা মেটাতে মুমূর্ষু কোভিড পজিটিভ রোগীদের জন্য এই ২৪ শয্যার আইসিইউ তৈরির সিদ্ধান্ত। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের তিনতলায় আইবি-৫ ওয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে ভেন্টিলেটর সুবিধাযুক্ত এই আইসিইউ।
আইজি হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনও পর্যন্ত এখানে চিকিৎসাধীন মাত্র দু’জন কোভিড পজিটিভ রোগীর ভেন্টিলেশন লেগেছে। ওই পরিষেবা দিতে গিয়েই প্রবল সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ডাক্তারবাবুরা। তারপরই আলাদা আইসিইউ তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। আইডি হাসপাতালের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এখানকার আরও কয়েকজন রোগীর ভেন্টিলেশন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়েছিল। তাঁদের আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্সে সল্টলেক আমরি ও টালিগঞ্জের এম আর বাঙুরে পাঠাতে হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, কিছু কোভিড রোগীর শারীরিক অবস্থার এত দ্রুত অবনতি হচ্ছে যে অন্যত্র পাঠানোরও সময় মিলছে না। তাই কোভিডের সঙ্গে লড়াইয়ে এই আইসিইউ অত্যন্ত জরুরি।
উল্লেখ্য, এই সমস্যা মেটাতে বাঙ্গুরে সম্প্রতি ১৪ শয্যার আইসিইউ চালু হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি বিল্ডিংয়ের সাততলায়। সেখানে প্রতি বেডেই ভেন্টিলেটরের সুবিধা আছে। এবং স্বাভাবিকভাবেই কোনও বেডই খালি নেই, সবক’টিই ভরতি। আইডি-তে কোভিড পজিটিভ রোগীর জন্য আইবি-২ ওয়ার্ডটি নির্দিষ্ট করা আছে। এখানে ভেন্টিলেটর মেশিন আছে। কিন্তু সেগুলি ব্যবহার করার মতো যথেষ্ট জায়গা নেই কেবিনে। জানা গিয়েছে, সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ৮২টি বেড রয়েছে আইডিতে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এক সমস্যা। জায়গার অভাব! ভেন্টিলেটর মেশিন লাগানোর পর স্বাস্থ্যকর্মী-চিকিৎসকের নড়াচড়া করার জায়গা থাকছে না। ফলে ইনটিউবেশন করতে বেজায় বিপাকে পড়ছেন ডাক্তারবাবুরা। অথচ কোভিড চিকিৎসায় আইসিইউ খুবই জরুরি। নোভেল করোনা ভাইরাস শরীরে প্রবেশের পর যদি ফুসফুসে পৌঁছে যায়, তাহলে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে রোগীর। বিশেষ করে যে সব রোগীর ফুসফুস আগে থেকেই দুর্বল তাঁদের সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘সেভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’ বা ‘সার্স’ হলে সি-প্যাপ মেশিন ও ভেন্টিলেশন দরকার। যা সময়মতো না পেলে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। এ রাজ্যে করোনা পজিটিভ বেশ কিছু রোগীর এভাবেই মৃত্যু হয়েছে বলে খবর মিলেছে। বিশেষ করে কিডনির সমস্যা, হার্টের সমস্যা, হাইপারটেনশন, লিভারের রোগ, ডায়াবেটিসের মতো কো-মরবিডিটি যুক্ত রোগী কোভিড পজিটিভ হলে তাঁকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করাই বাঞ্ছনীয়। বিশেষজ্ঞদের মত, আইডিতে নেগেটিভ প্রেশারযুক্ত আইসিইউ তৈরি হলে তা কোভিড মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.