কুণাল ঘোষ ও কিংশুক প্রামাণিক (মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): ‘কাজ দিয়েই ওদের হিংসার জবাব দেব।’ লন্ডন সফর শেষ করে শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘আমাদের কাজ, ওদের ঈর্ষা। যত কুৎসা, তত বেশি উন্নয়ন’’!
এবারের সফরে প্রবাসী বাঙালি-ভারতীয়, বিলেতবাসী থেকে শুরু করে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক-গবেষক-পড়ুয়ারা বিরল সম্মান দিয়েছেন তাঁকে। এই সম্মান শুধু মমতার একার নয়, বাংলারও। কারণ মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ‘বাংলায় নারীর ক্ষমতায়নে’র সাফল্য নিয়ে বলার জন্য। সফরের সাফল্য এখানেই যে তা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রযুক্তি-স্পোর্টস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি থেকে শুরু করে বাংলার সঙ্গে বিলেতের সমন্বয় একধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। খোদ লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম ডোরাইস্বামীও মুখ্যমন্ত্রীর কাজের এবং বাংলায় শিল্প-বান্ধব পরিবেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। হাইকমিশনারের এই ভূমিকাও বাংলাকে বিশ্ববাসীর কাছে আরও গৌরবান্বিত করেছে। ফেরার পথে হিথরো ও দুবাই বিমানবন্দরে সফরসঙ্গী প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপচারিতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এবারের লন্ডন সফর নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। সেখানে অক্সফোর্ডের আমন্ত্রণে ভাষণ থেকে শুরু করে সফল বাণিজ্য সম্মেলন-সহ সফরের নানা প্রসঙ্গ ওঠে। কেলগকলেজের প্রেক্ষাগৃহে ভাষণ চলাকালীন জনা তিন-চার রাম-বামের অভব্য আচরণকে যে হলের সিংহভাগ শ্রোতাই প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাও উল্লেখ করা হয়।
সেখানেই মমতা নাম না করে বাংলার বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করে বলেন, “ওরা যত চক্রান্ত করবে, যত বাধা দেবে, তত আমরা এগিয়ে যাব। মানুষকে সাথে নিয়ে, মানুষের প্রয়োজন মিটিয়ে বিপুল উন্নয়ন-কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত করব। আর সেই কারণে প্রতি পদে পদে, সব জায়গায়, সর্বক্ষেত্রে ওদের এই হিংসা-ঈর্ষার জবাব দেবে বাংলার সাধারণ মানুষ। ওরা (বিজেপি) কেন্দ্রের ক্ষমতায় থেকে যত বাংলার গৌরবকে খর্ব করার চেষ্টা করবে, আমরা তত পশ্চিমবঙ্গকে বিশ্বসভায় প্রতিষ্ঠিত করব।” অক্সফোর্ডে ভাষণের সময় মাত্র ছ’পিস রাম-বামের অসভ্যতা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “এসবের জন্যই সিপিএম আরও তলানিতে চলে যাচ্ছে। ওদের কাজকর্মের জন্যই মানুষ শূন্য করে দিয়েছে।” বামের সঙ্গে রামের বোঝাপড়া এবং বাংলা-বিরোধী কেন্দ্রের চক্রান্তের ইস্যুও ওঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণাত্মক বক্তব্যে। বলেছেন, “মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে বাংলার প্রতি ধারাবাহিক বঞ্চনা করে যাচ্ছে। মানুষ সবই বুঝতে পারছে। তবে ওরা যাই করুক না কেন, আমাদের কোনওদিনই বাংলার উন্নয়নের পথ থেকে সরাতে পারবে না।”
অক্সফোর্ডে ‘বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ন’ নিয়ে ভাষণের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে লন্ডনের বাণিজ্য সম্মেলন বাংলার জন্য একাধিক ‘সুখবর’-এর বার্তা এনে দিতে চলেছে। কারণ, ইতিমধ্যে লন্ডনের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি উড়ান এবং কলকাতায় অক্সফোর্ডের একটি ক্যাম্পাস চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত তৎপর হয়েছেন। সপ্তাহে অন্তত দু-দিন কলকাতা থেকে বিলেত যাওয়ার বিমান চালুর জন্য ব্রিটিশ বিমান সংস্থাকে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর অক্সফোর্ডের কলকাতা ক্যাম্পাসের জন্য তিনি যে কতটা উদগ্রীব হয়ে আছেন তা জানিয়ে মমতা বলেছেন, যেদিন হ্যাঁ বলবেন, পরদিনই জমি দিয়ে দেব।
লন্ডন থেকে রওনা হওয়ার আগে শিল্প সম্মেলনে ব্রিটিশ যে সমস্ত বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, সেগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন তিনি। সফরে সঙ্গে থাকা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও শিল্পসচিব বন্দনা যাদবকে লন্ডনে যে সমস্ত বাণিজ্য বৈঠকগুলি হয়েছে, তার ‘ফলোআপ’ দ্রুত কার্যকর করতে বলেন। বিশেষ করে যে সমস্ত ব্রিটিশ বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যে বাংলায় ব্যবসা করছেন কিন্তু এবারে শিল্প সম্মেলনে সংস্থার সম্প্রসারণের প্রস্তাব দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে এক্ষুনি কথা বলতে বলেন। এবারের সফরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, স্পোর্টস, আইটি ছাড়াও এআই প্রযুক্তি নিয়েও বিলেতের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প প্রতিনিধিদের বৈঠকে ইতিবাচক একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বস্তুত, সেই কারণে লন্ডন থেকে রওনা হওয়ার আগে শিল্প সম্মেলনের প্রতিটি বিষয় ধরে ধরে খুঁটিনাটি দিক উল্লেখ করে পর্যালোচনা শেষে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
হিথরো বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ রওনা দিয়ে শনিবার সকালে প্রথমে দুবাই পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। চালকহীন ভুগর্ভস্থ অটোমেটিক ট্রেনে করে টার্মিনাল বদল করে কলকাতার বিমান ধরার জন্য এগিয়ে যান। ঘণ্টা তিনেক যাত্রা বিরতি করেই দুপুরে রওনা হয়ে সন্ধ্যা ৬.৪৬ মিনিটে দমদম বিমানবন্দরে নামে মুখ্যমন্ত্রীর বিমান। আগে থেকেই বিমানবন্দরে সেখানে নেত্রীকে স্বাগত জানাতে ভিড় করেছিলেন প্রচুর দলীয় কর্মী, সমর্থক। সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বসিত। স্লোগান ওঠে – ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ!’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.