রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ফাইল ছবি
অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ভোটের দিন ভ্রাম্যমাণ রাজভবন! সকাল থেকে নিজেই তিনি থাকবেন রাস্তায়। ভোটে একটিও যে হিংসা যে বরদাস্ত নয়, সে বার্তাও আরও একবার দিলেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের কড়া বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
শনিবার সকালে রাজ্যপাল বলেন, “লোকসভা নির্বাচনের প্রথম পর্ব থেকে ভোট ময়দানে থাকবে। সাধ্যমতো চেষ্টা করব। সকলের ঘুম ভাঙার আগেই রাস্তায় নামব। জন রাজভবন বা ভ্রাম্যমাণ রাজভবন হিসাবে থাকব। মানুষের সবসময় কাছে পাবেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো রক্ত নিয়ে হোলি খেলা চলবে না। মানুষের রক্ত দিয়ে রাজনীতির হোলি খেলা বরদাস্ত নয়।” বলে রাখা ভালো, ভোট হিংসা নিয়ে আগেও সোচ্চার হয়েছেন রাজ্যপাল। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে রাজ্যপালের হুঁশিয়ারি যে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
রাজ্যপাল বোসের মন্তব্য নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা। রাজ্যপালের মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। রাজ্যপালকে সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’ পড়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “ভোটের দিন রাজ্যপালের রাস্তায় কোনও কাজ নেই। তার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনী যাতে বিজেপির ক্যাডারের মতো কাজ না করে সেদিকে নজর রাখুন।”
এদিকে, শনিবার সাতসকালে লঞ্চে গঙ্গা পেরিয়ে টোটো চেপে আমজনতার মতো হাওড়ার স্কুলে যান রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ রাজভবন থেকে বেরন। গঙ্গায় লঞ্চ পেরিয়ে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। মাথায় কালো টুপি, গায়ে সাদা জামা পরা রাজ্যপালকে প্রথমে চিনতে পারেননি কেউ। খবর পাওয়ার পরেই হাওড়া সিটি পুলিশের সমস্ত পদস্থ কর্তা ছুটে আসেন। তিনটি টোটো ভাড়া করেন। টোটো চালকদের হাওড়ার একটা বড় স্কুলে নিয়ে যেতে বলেন। টোটো চালকরাই তাঁকে গঙ্গার ঘাট থেকে মিনিট পাঁচেকের দূরত্বে হাওড়ার একটি হিন্দি মাধ্যম স্কুলে নিয়ে যান।
ওই স্কুলের সামনে নেমে রাজ্যপাল তিনটি টোটো চালককে ৫০০ টাকা করে ভাড়া দেন। তার পর ঢুকে পড়েন স্কুলে। রাজ্যপালকে দেখে হইচই পড়ে যায় গোটা স্কুলে। পরে স্কুল থেকে বেরনোর সময় রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি বাংলাকে আবিষ্কার করতে চাই। সবচেয়ে ভালো উপায় স্কুলে গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে মেশা। সেটাই আমি করেছি। আমি খুব উৎসাহিত এবং উজ্জীবিত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে। এই বাংলার পড়ুয়ারা সারা পৃথিবীর মধ্যে সেরা।’’ রাজ্যপাল গাড়িতে ওঠার আগে বলেন, ‘‘থ্রি চিয়ার্স ফর টিচারস অ্যান্ড থ্রি চিয়ার্স ফর স্টুডেন্স।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.