শুভঙ্কর বসু: লকডাউন শুরুর পর পরই দুই সন্তানকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী। হাজার খোঁজাখুঁজির পরও হদিশ মিলেছে না। বেপাত্তা স্ত্রীর আইনজীবীও! এই পরিস্থিতিতে সন্তানদের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা কৌশিক মিত্র। তাঁর বক্তব্য শুনে শেষ পর্যন্ত স্ত্রী ঈপ্সিতা ও তাঁর আইনজীবীকে খুঁজে দিতে আলিপুর আদালতের বিচারককে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজশেখর মন্থা।
কিন্তু পুলিশের পরিবর্তে বিচারককে নির্দেশ কেন? বছর কয়েক আগের ঘটনা। দম্পতির মধ্যে সাংসারিক কলহ মাত্রা ছাড়া হয়ে ওঠায় শেষ পর্যন্ত তা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। মা হিসেবে সন্তানদের কাছে রাখার অগ্রাধিকার পান ঈপ্সিতা। বাবা হিসেবে কৌশিককে সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করার অধিকার দেয় আদালত। খোরপোশের অঙ্কও ঠিক হয়ে যায়। এর মাঝেই কৌশিকের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে গার্হস্থ্য হিংসা আইনে মামলা করেন ঈপ্সিতা। যেটি এখন আলিপুর আদালতের সাত নম্বর দায়রা বিচারকের এজলাসে চলছে।
যাইহোক, এরপর সব মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল। আদালতের নির্দেশ মত সপ্তাহে একবার সন্তানদের দেখা পাচ্ছিলেন কৌশিক। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই বিপত্তি বাধে। ইপ্সিতার বাপের বাড়িতে গিয়ে সন্তানদের দেখা সম্ভব নয় জেনে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে দেখা করতে চান কৌশিক। কিন্তু তাতে আপত্তি প্রাক্তন স্ত্রীর! মেনে নেন কৌশিক। এরপর আনলক পর্ব শুরু হতেই সন্তানদের দেখতে ইপ্সিতার বাড়ি যান তিনি। কিন্তু তাঁকে জানানো হয়, সেখানে তারা নেই।
বাধ্য হয়ে এবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কৌশিক। কিন্তু তাতেও বিপত্তি কাটেনি। মামলার পক্ষ হিসেবে যে নোটিস সার্ভ করতে হয় ইপ্সিতার হদিস না মেলায় সেটি পৌঁছনো যায়নি। এরপর আলিপুর আদালতে কৌশিকের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা আইনে যে মামলাটি চলছে তাতে ইপ্সিতার পক্ষে যে আইনজীবী ছিলেন তার মারফত প্রাক্তন স্ত্রীকে নোটিশ পৌঁছানোর চেষ্টা করেন কৌশিক। তাতেও বিফল হন। সেই আইনজীবীরও কোনও খোঁজ মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টে মামলাটি উঠলে বিচারপতি রাজশেখর মন্থাকে সমস্ত বৃত্তান্ত জানান কৌশিকের আইনজীবী রোহিত বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর বিচারপতি মন্থা নির্দেশ দেন, আলিপুর আদালতের সাত নম্বর দায়রা বিচারকের এজলাসে যেহেতু এখনও গার্হস্থ্য হিংসার মামলাটি চলছে তাই পুলিশের সাহায্যে স্ত্রী ও তাঁর আইনজীবীকে খুঁজে বার করার ভার ওই বিচারককেই দেওয়া হল। যদি দেখা যায়, স্ত্রী ইচ্ছাকৃত বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন তাহলে কৌশিকবাবুর বিরুদ্ধে চলা গার্হস্থ্য হিংসা মামলাটি আপনাআপনি খারিজ হয়ে যাবে। আর যদি তাদের খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে কৌশিকবাবুকে ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেবেন স্ত্রী। তিন সপ্তাহ পর ফের মামলাটির শুনানি হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.