শুভঙ্কর বসু: গার্হস্থ্য হিংসায় দাম্পত্য ভাঙতে সময় লাগে না। কিন্তু একবার আইনের চৌহদ্দিতে ঢুকে পড়লে সেই ভাঙা সম্পর্ক ঝেড়ে ফেলে স্বাধীন হওয়া অত সহজ নয়। অপরাধীকে কৃতকর্মের দায় যে বইতেই হবে, কলকাতা হাই কোর্টের এক নির্দেশে তা ফের স্পষ্ট।
জেন ওয়াইয়ের যুগে সামান্য দাম্পত্য কলহ সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণ হচ্ছে। কিন্তু ভাঙা সম্পর্কের পরিণতি যে মারাত্মক হতে পারে তা কেউ মনে রাখে না। যেমনটা মনে রাখেননি হাওড়ার কৃষ্ণেন্দু দাস ঠাকুর ও তাঁর স্ত্রী কল্পনা (নাম পরিবর্তিত)। বিয়ের বছর খানেক কাটতে না কাটতেই দাম্পত্য কলহ শুরু। কয়েক দিনেই তা চরম আকার নেয়। কারণে-অকারণে অশান্তি যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৪-র মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি তিক্ত হয়ে ওঠে। এবার স্বামীর বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হন কল্পনাদেবী।
হাওড়া নিম্ন আদালতে বছরখানেক সেই মামলার বিচার চলার পর স্ত্রীর পক্ষেই রায় দেন বিচারক। আদালত জানিয়ে দেয়, খাইখরচ বাবদ স্ত্রীকে প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা খোরপোশ দিতে হবে। স্ত্রীর অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে কল্পনাদেবীকে আরও ৮০০ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। কৃষ্ণেন্দুবাবু আপত্তি করেননি। মুখ বুজে সব মেনে নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ভালই হল, সম্পর্ক থেকে তো নিস্তার মিলল! কিন্তু ভাঙা সম্পর্ক থেকে নিস্তার পাওয়া যে অত সহজ নয় তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কৃষ্ণেন্দুবাবু।
নিম্ন আদালতের নির্দেশের মাস কয়েক কাটতে না কাটতেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা রুজু করেন তিনি। আদালতের নির্দেশে বছর খানেকের মধ্যে কৃষ্ণেন্দুবাবু ও কল্পনাদেবীর বিবাহ বিচ্ছেদও হয়ে যায়। এবার কৃষ্ণেন্দুবাবু ঝাড়া হাত পা। কল্পনাদেবীর প্রতি তাঁর আর কোনও দায়িত্ব নেই। এই ভেবে পালটা আদালতে মামলা করে দাবি করেন, তিনি এখন আর কল্পনাদেবীর সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ নন। তাই তাঁর পক্ষে খোরপোশ এবং বাড়ি ভাড়া আর দেওয়া সম্ভব নয়। এবার প্রথম ধাক্কা খান কৃষ্ণেন্দু। নিম্ন আদালত তাঁর আরজি খারিজ করে জানিয়ে দেয়, একমাত্র নির্যাতিতার আবেদনের ভিত্তিতেই আদালত আগের নির্দেশ বদলাতে পারে। নিম্ন আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কৃষ্ণেন্দুবাবু।
বিচারপতি মধুমতী মিত্রর এজলাসে শুনানি পর্বে উভয় পক্ষই নিজের যুক্তি পেশ করে। সব শেষে মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি মিত্র জানিয়ে দিয়েছেন, “বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে মানেই সমস্ত দায় শেষ হয়ে গেল এমন ভাবার কোনও কারণ নেই।” তিনি বলেন, “একজন ভারতীয় হিন্দু নারী বিবাহ বিচ্ছেদের পর ফের বিয়ে না করা পর্যন্ত প্রাক্তন স্বামী তাঁকে খোরপোশ দিতে বাধ্য। এক্ষেত্রেও সেটাই প্রযোজ্য হবে।” এরপরই কৃষ্ণেন্দুবাবুর আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি মিত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.