ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: বৃহস্পতিবারই কসবা এলাকায় অ্যাসিড হামলার খবর মিলেছিল। প্রকাশ্য দিবালোকে মহিলার উপর অ্যাসিড ছুঁড়ে পালাতে গেলেই হামলাকারীকে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। সেই অ্যাসিড হামলারকারী আসলে মহিলার স্বামী। স্ত্রী’র পরকীয়ার সন্দেহেই মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ে সেই ব্যক্তি।
স্ত্রীকে সন্দেহ। তাই তাঁর সঙ্গে বিচ্ছেদ। এতেও রেহাই পাননি গৃহবধূ। ছেলেকে স্কুলে খাওয়াতে এসে ‘গুণধর’ স্বামীকে দেখে একটু ঘাবড়েই গিয়েছিলেন মহিলা। অতর্কিতে তাঁর উপর আক্রমণ। রাস্তার উপর প্রথমে মহিলার মাথায় স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে আঘাত করে স্বামী। তাতে বাধা পেয়ে এবার স্কুটির সামনের দিক থেকে একটি মদের বোতল বের করে ওই ব্যক্তি। মহিলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মদের বোতলে রাখা অ্যাসিড ছুঁড়ে দেয় মহিলার দিকে।
পুলিশের দাবি, মহিলা কোনওমতে মাথা সরিয়ে নেন। প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় তিনি ছেলের স্কুলে ঢুকে পড়ার পর একটি কালো রঙের প্লাস্টিকে অ্যাসিড ঢেলে তা ছুড়ে দেয় স্কুলের মধ্যে। সেই অ্যাসিডের ছিটে লাগে কয়েকজনের শরীরে, এমন অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দারা ধরে ফেলেন মহিলার স্বামীকে। ব্যক্তির নাম জয়ন্ত দাস। তাঁকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
‘ছপাক’ সিনেমাটি রিলিজ হওয়ার পর সারা দেশের মানুষের কাছেই অ্যাসিড হামলা আলোচনার বস্তু। সেখানে কলকাতায় হওয়া এই ঘটনাটিকে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। শহরে ফের অ্যাসিড হামলার অভিযোগ। এর আগেও কখনও হাজরা রোড, কখনও বেহালায় ঘটেছে অ্যাসিড হামলার অভিযোগ। হামলাকারী কোথাও অচেনা ব্যক্তি,কোথাও বা পরিচিত কিংবা বন্ধু। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর শরীরে অ্যাসিড ছুড়ছেন, এমন ঘটনা বিরল।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার কসবায় ঘটল এই ঘটনা। এই ঘটনার পর মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মেডিক্যাল রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মহিলার মাথায় স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে একাধিকবার আঘাত করা হয়েছে। খুলির অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শরীরের অন্য অংশেও রয়েছে হামলার চিহ্ন। মেডিক্যাল রিপোর্টে অ্যাসিড হামলার কোনও উল্লেখ করা হয়নি। যদিও মহিলা চিকিৎসকে জানিয়েছেন, তাঁর উপর অ্যাসিড হামলা হয়েছে। সেই বক্তব্য ও মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে কসবা থানার পুলিশ মারাত্মক আঘাত ও অ্যাসিড হামলার ধারা প্রয়োগ করেছে। বোতল ও প্লাস্টিকে যে তরল বস্তুটি পাওয়া গিয়েছে, তা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কসবার বোসপুকুরের বাসিন্দা ওই মহিলার সঙ্গে জয়ন্ত নামে ব্যক্তির বছর আটেক আগে বিয়ে হয়। ওই দম্পতির এক ছেলে, এক মেয়ে রয়েছে। তারা মায়ের কাছেই থাকে। দম্পতির ৫ বছরের ছেলে কসবারই বি বি চ্যাটার্জি রোডের একটি স্কুলের ছাত্র। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি জয়ন্ত বহুদিন থেকেই স্ত্রীকে সন্দেহ করত। বলত, তার স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক আছে। বিষয়টি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল শুরু হয়। তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। তবু গোলমাল চলত। এদিন টিফিনের সময় মা তাঁর ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য স্কুলের সামনে আসেন। হঠাৎই স্কুটি করে স্বামীকে আসতে দেখেন মহিলা। অভিযোগ, মদ্যপ ছিল জয়ন্ত। স্কুটি থেকে নেমে স্ত্রীর সঙ্গে বচসা ও হাতাহাতি শুরু করে সে। এর পরই একটি স্ক্রু ড্রাইভার বের করে ‘গুণধর’ স্বামী তার স্ত্রীকে একের পর এক আঘাত করতে থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.