অর্ণব আইচ: চার হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি! কলকাতায় বসে এই বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে জালিয়াতি চক্রের মাথারা। দেড় মাস তদন্ত করেই এই বিশাল দুর্নীতির হদিশ পান লালবাজারের গোয়েন্দারা। এই চার হাজার কোটি টাকার একটি বড় অংশ চিনের কয়েকজন বাসিন্দার কাছে গিয়েছে বলে ধারণা পুলিশের।
চিন ছাড়াও কলকাতা হয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে। যেহেতু যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে, সেটি জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাংক, তাই ওই টাকা ঘুরপথে পাকিস্তানে গিয়েছে কি না, সেই তথ্যও খতিয়ে দেখছে লালবাজার। তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ এই চক্রের মাথা চার ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এই চক্রের পিছনে আরও কয়েকজন যে রয়েছে, সেই ব্যাপারে গোয়েন্দারা নিশ্চিত। এই বিপুল টাকা পাচারের বিষয়টি কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে আয়কর দপ্তরকেও জানানো হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও এই ব্যাপারে তদন্ত করতে পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চার ব্যবসায়ীর নাম সতীশ লাখোটিয়া, রোহন মল্লিক, মাইকেল জোসেফ ও বিপিন সাউ। পুলিশের দাবি, কলকাতা ও তার আশপাশ থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। মধ্য কলকাতার ডালহৌসি এলাকার জম্মু ও কাশ্মীরের একটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে ১১টি বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্ট। ওই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে। দেশের অন্তত একশোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ওই ১১টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পারেন ব্যাংকের আধিকারিকরা। একসঙ্গে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার লেনদেন দেখে সন্দেহ হয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। ব্যাংকের আধিকারিকরা বিষয়টি কলকাতা পুলিশকে (Kolkata Police) জানান। এর আগেও একই পদ্ধতিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লগ্নি অ্যাপ চক্র, গেমিং অ্যাপ চক্রের বিপুল টাকার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাই এই তথ্যের ভিত্তিতেই মধ্য কলকাতায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের হয়।
পরে এই মামলার তদন্তভার নেয় লালবাজারের ব্যাংক জালিয়াতি দমন শাখা। গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, বিভিন্ন রাজ্যে শতাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে কলকাতার যে বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্টে বিপুল টাকা এসেছে, সেই সংস্থাগুলি জিনিস সরবরাহের নাম করে ভুয়া বিল তৈরি করে। সেই বিলের মাধ্যমে ব্যবসার নথি তৈরি করা হয়। সেই নথির ভিত্তিতেই কলকাতা থেকে টাকা পাচার হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে, যার মধ্যে উঠে এসেছে চিনের নাম। এবার ওই টাকার উৎসের সন্ধানে গোয়েন্দারা। যেহেতু চিনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ, তাই এই টাকা লোন অ্যাপের, এমন সম্ভাবনাও রয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কেওয়াইসি-র সূত্র ধরেই চার ব্যবসায়ীর সন্ধান পান গোয়েন্দারা। এবার এই চক্রের বাকিদেরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.