অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: হাওড়ার জলসংকট মেটাতে গিয়ে উঠে এল বড় সমস্যা। ভূ-বিজ্ঞানীদের দাবি, ভাগাড় এলাকার ভূ-গর্ভে তৈরি হচ্ছে মিথেন গ্যাস! আর তার সঙ্গে মিশছে গঙ্গার জল। খুব তাড়াতাড়ি এই গ্যাস বের করার ব্যবস্থা না করলে ঘটতে পারে বড়সড় বিপদ! ধসে যেতে পারে গোটা এলাকাই! এমনই ভয়াবহ আশঙ্কা ক্রমে দানা বাঁধছে।
বৃহস্পতিবার হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধস নামে। ফেটে যায় শিবপুর ও উত্তর হাওড়া কেন্দ্রের জল সরবরাহের মূল পাইপলাইন। চরম সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। প্রায় দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তায় ফাটল দেখা দেয়। অনেক বাড়িঘরেও ফাটল ধরেছে। আতঙ্কিত বাসিন্দাদের পাশের স্কুলগুলিতে পাঠানো হয়।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো শনিবার বিকেল থেকে নতুন সমস্যা দেখা যায়। জানা যায়, মাটি থেকে বেরচ্ছে মিথেন গ্যাস। কিন্তু কেন? ভূবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই ভাগাড়ে দীর্ঘদিন ধরে আবর্জনা ও পশুপাখির মৃতদেহ জমা হয়েছে। এবার পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রাণীদেহের রস শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কার্যত হারাতে বসছে মাটি। ফলে মাটির তলা ফেঁপে গিয়েছে। আর মাটির নীচে ফাঁকা জায়গা থাকলে তৈরি হয় মিথেন গ্যাস! এত অবধি তবুও ঠিক ছিল! কিন্তু গঙ্গা কাছে হওয়ায় নদীর জল মিশছে মিথেন গ্যাসের সঙ্গে। তৈরি হচ্ছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি। তাতেই আশঙ্কা ধসে যেতে পারে গোটা এলাকা।
ভূবিজ্ঞানী সুজীব কর বলছেন, “ভাগাড়ে পড়ে থাকা পচাগলা দেহরস এলাকার মাটিকে নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে মাটির তলা ফেঁপে গিয়ে ওখানে মিথেন গ্যাস ও গঙ্গার জল ঢুকে গিয়েছে। যার জেরে যে কোনও সময় ভাগাড় সংলগ্ন এলাকা মাটির তলায় চলে গিয়ে বড়সড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। প্রশাসনের উচিত খুব দ্রুত মাটিতে গহ্বর তৈরি করে মিথেন গ্যাস বার করা। তবেই বড়সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।”
এদিকে রবিবার ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা রাজ্যের দু’টি দলের। সকাল ১১টা নাগাদ কলকাতা থেকে যাবে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের একটি দল। তারা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। এছাড়াও আইআইএসটি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার ও রাজ্য সরকারের ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল যাবে দুপুর ২ নাগাদ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর জেলাশাসকের বাংলাতে যাবেন তাঁরা। সেখানে বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে তিনটে-চারটে নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক হবে। সেখানেই আগামী পরিকল্পনা জানানো হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে জলসরবাহ মোটামুটি ঠিক রাখতে ট্যাঙ্কারের সাহায্যে বাড়ি বাড়ি জল দেওয়া হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১৮টি পরিবারের ৩৫০ জনকে একটি স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে স্থানীয় প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.