ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার, হাওড়া: সহ্য হচ্ছে না কাজের চাপ। অফিস থেকে প্রয়োজন ছুটির। কিন্তু সহজে ছুটি পাওয়া যাচ্ছে না। এই সমস্যার সমাধানে এখন একমাত্র হাতিয়ার করোনা। সরকারি বা বেসরকারি অফিসকে করোনার (Corona Pandemic) রিপোর্ট পজিটিভ দেখিয়ে দিতে পারলেই কেল্লা ফতে। করোনা না হলেও পজিটিভ রিপোর্ট দেখিয়ে হোম আইসোলেশনের নামে টানা ১৫ দিন চলে যাওয়া যাবে বিশ্রামে। কিন্তু কোভিড না হলে পজিটিভ রিপোর্ট দেবে কে?
অথবা উলটোটাও হচ্ছে অনেকসময়। জরুরি প্রয়োজনে কেউ ভিনরাজ্যে যাবেন। বিমানে ওঠার আগে দরকার করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট। আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে করোনা পরীক্ষার ফলাফল আসতে তো দিন দুয়েক সময় লাগবেই। অথচ কাজের জন্য দ্রুত ভিনরাজ্যে যাওয়া প্রয়োজন। তাহলে উপায় কী? গোলাবাড়ির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাবের দুই কর্মী টাকা নিয়ে এইসব মুশকিল আসান করে দিচ্ছিল। সাধারণ মানুষকে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত রিপোর্ট করোনার পরীক্ষা ছাড়াই পজিটিভ কিংবা নেগেটিভ করে দিয়ে দিচ্ছিল তারা। রীতিমতো ওই বেসরকারি হাসপাতালের প্যাড, স্ট্যাম্প জাল করে এই কাজ করা হচ্ছিল। অবশেষে পুলিশের জালে পড়ল ওই দুই কর্মী। অভিজিৎ মাইতি ও অমিত লাহা নামে দুই ল্যাব কর্মীকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
ঠিক কতজনকে এভাবে জাল পজিটিভ বা নেগেটিভ রিপোর্ট ওই দুই ল্যাব কর্মী দিয়েছে তা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছেন গোলাবাড়ি থানার তদন্তকারীরা। সেজন্য বৃহস্পতিবার এদের হাওড়া আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে তারা। অভিজিতের তিন দিন ও অমিতের চার দিন পুলিশ হেফাজত হয়েছে। এক এক জনের কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ভুয়ো রিপোর্ট হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দিচ্ছিল দু’জন। বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই। তারাই মঙ্গলবার গোলাবাড়ি থানায় দু’জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এর পর ঘটনার তদন্তে নেমে ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার গোলাবাড়ি থানা এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে গিয়ে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয় তদন্তকারীদের কাছে। ওই ব্যক্তি পুলিশের সামনে স্বীকার করেন অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য তিনি কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট বার করতে চেয়েছিলেন। সেই মতোই ওই বেসরকারি হাসপাতালের ল্যাব কর্মী অমিতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। অমিতই তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পজিটিভ রিপোর্ট বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কত টাকা চাওয়া হয়েছিল তা বলতে চাননি ওই ব্যক্তি। সেই মতো হোয়াটসঅ্যাপে কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয় অমিত। পরে ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ হয়েছে। এর পরই জালিয়াতির বিষয়টির হাতেনাতে প্রমাণ পেয়ে যায় পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি নর্থ অনুপম সিং বলেন, “দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এরা জাল রিপোর্ট তৈরি করে কত টাকা করে নিত তা এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা চলছে। এর পিছনে বড় কোনও চক্র আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” অন্যদিকে, গোলাবাড়ির ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই দুই ল্যাবকর্মী এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করে হাসপাতালের সুনাম নষ্ট করেছে। তাই ওদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দু’জনেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.