প্রতীকী ছবি।
কৃষ্ণকুমার দাস: এবার সরকারি চাকরির পরীক্ষার বিষয়ও কোভিডে (COVID-19) মৃতের দেহ দাহ। কত দ্রুত ও নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দেহ চুল্লিতে পৌঁছাতে পারছেন পরীক্ষার্থী, সেই ‘দক্ষতা ও যোগ্যতা’ই হয়ে উঠেছে কর্মক্ষেত্রে শূন্যপদে নিয়োগের মূল মাপকাঠি। কলকাতা পুরসভায় (KMC) ডোমের জন্য ২২টি শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন। হাজার কয়েক আবেদনপত্র ঝাড়াই-বাছাইয়ের পর ৮৮৮ জন পরীক্ষার্থীকে ওই পদের জন্য ‘ফিল্ড টেস্ট’-এ ডাকা হয়েছে।
এই পরীক্ষা হচ্ছে ধাপায় কোভিডের জন্য নির্ধারিত বৈদ্যুতিক চুল্লিতে দেহ সৎকারের কাজে দক্ষতা যাচাইয়ের মাধ্যমে। গত ১২ নভেম্বর থেকে দেহ পোড়ানোর ‘ফিল্ড-টেস্ট’ দিয়ে নিয়োগের ইতিহাসে এই প্রথম পুরসভায় ডোমের পদে বাছাই শুরু করেছে কমিশন। অভিনব পদ্ধতিতে এই চাকরির পরীক্ষা চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অন্য শ্মশানেও ডোম পদে নিয়োগের ফিল্ড টেস্ট হচ্ছে।
পরীক্ষার্থীরা কে, কত দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে শববাহী গাড়ি থেকে দেহ নামিয়ে চুল্লিতে পৌঁছে দিচ্ছেন, তার উপর নজর রাখছেন পরীক্ষকরা। যদি দেহ নামানো বা রাখার সময় কোনওরকম অশ্রদ্ধা বা ঘৃণাভাব মুখে ফুটে ওঠে, তা হলে সেই পরীক্ষার্থী পুরো ডাহা ফেল করছেন। যে পরীক্ষার্থীর চোখে-মুখে ‘দায়বদ্ধতা’ প্রকাশ পাচ্ছে এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকছে, তিনি নিয়োগের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছেন। ‘ফিল্ড-টেস্ট’-এর দায়িত্বে থাকা সার্ভিস কমিশনের এক ‘পরীক্ষক-অফিসার’ জানালেন এমনটাই। তাঁর স্বীকারোক্তি, “অনেক পরীক্ষার্থী কর্পোরেশনের সরকারি চাকরিতে শূন্যপদ দেখে আবেদন করেছেন। কিন্তু ‘ফিল্ড-টেস্ট’ দিতে এসেই কোভিডে মৃতের দেহ নামাতে হবে শুনেই পালিয়ে যাচ্ছেন।” কোভিডের অন্ত্যেষ্টিতে অংশ নিয়ে ‘ফিল্ড-টেস্ট’ দিয়ে যাঁরা ‘লেটার’ মার্কস পাচ্ছেন, তাঁর ভাগ্যে সরকারি নিয়োগের শিঁকে ছেড়া কিন্তু অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। ডোমের পদে শুধু পুরুষ নন, অনেক মহিলা এবং উচ্চবর্ণের বেকার যুবক-যুবতীরাও আবেদন করেছেন।
তবে শুধুমাত্র ডোম পদে নয়, কলকাতা পুরসভায় সাফাই বিভাগে মজদুরের জন্য যে নিয়োগ হচ্ছে তার ফিল্ড টেস্টেও বেলচা দিয়ে রাস্তার জঞ্জাল লরিতে তোলার দক্ষতা ও যোগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি করেছে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন। ৪০ কেজি বর্জ্য পরীক্ষার্থী কত দ্রুত ও পরিচ্ছন্নভাবে লরিতে তুলতে পারছেন, সেটা বিচার্য সরকারি ইন্টারভিউতে। আবার আধ কিলোমিটার চওড়া পিচ রাস্তা কত কম সময়ে পরীক্ষার্থীরা ঝাড়ু দিয়ে সাফ করতে পারছেন, তাও বিচার করছে কমিশন।
গত ৩ নভেম্বর শুরু হওয়া মজদুর হিসাবে ৬৮০টি শূন্য পদের জন্য ‘ফিল্ড টেস্ট’-এ ১১,৯৩২ জন ডাক পেয়েছেন। পরীক্ষা চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। দুই শূন্য পদে নিয়োগের এমন অভিনব ‘ফিল্ড টেস্ট’ শুনে সন্তুষ্ট পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বলেছেন, “মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশন স্বশাসিত সংস্থা। কিন্তু যে দুই পদে কর্মীদের নেওয়া হচ্ছে, সেই দায়িত্ব সম্পর্কিত পরীক্ষা-পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মতভাবেই হচ্ছে। এতে যোগ্যরা চাকরি পেলে নাগরিক পরিষেবা আরও উন্নত হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.