তরুণকান্তি দাস: মিডনাইটস চিলড্রেন: বিতর্কের ঝড় তোলা বই৷ নিষিদ্ধ বহু দেশে৷ কড়কড়ে পাঁচশো, হাজারের নোটে মধ্যরাতের লেনদেন৷ সে দিকে কড়া নজর এই দেশে৷ এবং তৎপরতা রাজ্যেও৷
অন্তত যে দিন বড় অঙ্কের দু’টি নোট বাতিল করল কেন্দ্র সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত যে ভাবে বড় অঙ্কের কেনাকাটার জন্য হুমড়ি খেয়েছিল শহর তা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে আয়কর দফতরের কর্তাদের কপালে৷ ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নগদে পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি কেনাকাটা কারা করেছেন সেই তালিকা চেয়ে পাঠানো হবে৷ বিভিন্ন বহুশাখা বিপণি, সোনার দোকান, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর শো-রুম রয়েছে আয়করের স্ক্যানারে৷ এই সব লেনদেন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়ে পাঠানো হচ্ছে৷ তার পর প্রতিটি খতিয়ে দেখা হবে৷
আয়কর দফতরের (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন) অতিরিক্ত ডিরেক্টর প্রিয়ব্রত প্রামাণিক জানান, “গুরুতর কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি৷ সেগুলি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷” এ ছাড়া ব্যাক-ডেটেড বিল নিয়েও বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছে আয়কর দফতর৷ তার অধিকাংশ স্বর্ণশিল্পকেন্দ্রিক৷ তবে বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্প সমিতির অভিযোগ, এমনিতে মন্দা চলছে অলঙ্কার ব্যবসায়৷ তার উপর অযথা বাড়তি চাপ ক্রেতাদের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে৷ ফলে মাছি তাড়াচ্ছে বউবাজার, গড়িয়াহাট থেকে জেলার সোনাপট্টি৷ মঙ্গলবার কলকাতায় বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার বলেছেন, “এখন কারিগরদের হাতে কোনও কাজ নেই৷ স্টক কমলে তবেই না কাজ বাড়বে৷ মানুষ তো ভয়েই মরছে৷ টাকা কোথায়?”
কিন্তু ভয়কে উড়িয়ে বাড়তি সাহসের ডানায় ভর করে যাঁরা সেদিন সোনা কিনেছেন? যাঁরা হামলে পড়ে দরদাম না করেই টিভি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, এসি-র মতো দামি জিনিস কিনেছেন স্রেফ বাক্সবন্দি পাঁচশো-হাজারের বান্ডিলের ঝক্কি ঝেড়ে ফেলতে? “সবই আমাদের নজরে রয়েছে৷ আমরা জানি বহু মানুষ সেদিন মধ্যরাত পর্যন্ত যথেচ্ছ কেনাকাটা করেছেন৷ নগদে মূল্য মিটিয়েছেন৷ এখন যদি হিসাব বহির্ভূত নগদ খরচ করেছেন এমনটা ধরা পড়ে তো তার মূল্যও চোকাতে হবে তাঁদের৷” বলেছেন প্রিয়ব্রতবাবু৷ প্রাথমিকভাবে আয়কর দফতরের কাছে খবর এসেছে, গত আট নভেম্বর নোট বাতিল ঘোষণার পরই কেনাকাটা বেড়ে গিয়েছিল শপিং মল, সোনার দোকানে৷ অনেকে আগুপিছু না ভেবে অলঙ্কারের পরিবর্তে নগদ লগ্নি হিসাবে বাট বা বিস্কুট কিনেছেন৷ এমনিতে দু’লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার কিনলে প্যান নম্বর উল্লেখ করতে হয় বিলে৷ সেই কথা মাথায় রেখে অনেকে তার চেয়ে সামান্য কম অঙ্কের সোনা বা হিরে ঘরে তুলেছেন৷ সেক্ষেত্রে মোটামুটি পঞ্চাশ হাজারের বেশি অঙ্কের ক্রয়ের উপর নজরদারি রেখেছে আয়কর দফতর৷ সেই সব তথ্য জোগাড় করতে চিঠি পাঠানো হতে পারে সংশ্লিষ্ট দোকানগুলিকে৷ শুধু তাই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে ৯ নভেম্বরের বিল দেখানো হয়েছে আগের দিনের কেনাকাটা হিসাবে৷ সেক্ষেত্রে বিলের ক্রমিক নম্বর খতিয়ে দেখতে চাওয়া হবে৷
পাশাপাশি আরও একটি বিষয় নজরে এসেছে আয়কর কর্তাদের৷ বেশ কিছু ব্যাঙ্কে জনধন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে বড় অঙ্কের টাকা৷ দেখা গিয়েছে, গত দু’মাস যে আমানতে মাত্র দুশো থেকে হাজার টাকা পড়ে ছিল, সেখানে হঠাৎ করে ঢুকেছে এক লাখের বেশি টাকা৷ কলকাতার একটি শাখায় একাধিক অ্যাকাউন্টে এমন ঘটনায় অবাক আয়কর দফতরের ভিজিল্যান্স টিম সেই টাকার উৎস সন্ধানে নামেছে৷ সেখানেও কালো টাকা সাদা করার খেলার মতো রহস্য রয়েছে বলে ধারণা তাঁদের৷ সবমিলিয়ে অন্ধকারঘন নানা দিকে আলো ফেলতে এখন ঘুম নেই আয়কর কর্তাদের৷ তা দিনের আলোয় হোক বা মধ্যরাতের লেনদেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.