অর্ণব আইচ: অঘোরে ঘুমোচ্ছিল ২৫ দিনের শিশুটি। ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে শিশুটির মুখের উপর বালিশ চেপে ধরল ১৬ বছরের বালিকা বধূ। ভাল করে কাঁদতেও পারছে না শিশুটি। ঘটনাটি দেখেই চমকে উঠেছিলেন বাড়ির এক বাসিন্দা। তাঁর চিৎকারেই তাড়াতাড়ি বালিশ সরিয়ে নেয় সে। বেঁচে যায় শিশুপুত্রটি। রবিবার দক্ষিণ কলকাতার পঞ্চসায়র এলাকার শহিদ স্মৃতি কলোনি এলাকায় ঘটে এই ঘটনাটি। যে বালিকা বধূটি খুনের চেষ্টা করেছে, সে শিশুটির নিজের কাকিমা। সে কেন তার নিজের জা’য়ের ছেলেকে খুনের চেষ্টা করল, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন মহিলা ওই মেয়েটিকে গণধোলাইও দেয়। ওই বালিকা বধূটিকে আটক করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে তোলা হয়। তাকে একদিনের জন্য হোমে রাখা হয়েছে।
পুলিশের এক কর্তা জানান, তাঁদের সন্দেহ, ১৬ বছর বয়সের ওই কিশোরীটি কোনও ‘সাইকো’। একেই কম বয়সে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। তার উপর মেয়েটির ধারণা হতে পারে যে, শ্বশুরবাড়িতে তার ভালবাসা কেড়ে নিয়েছে ওই একরত্তি শিশুটি। শিশুটি জন্মের পর থেকে তাকে আগের মতো কেউ ভালবাসছে না। হয়তো তার স্বামীও নয়। তাই তার পুরো রাগ পড়ে ওই শিশুটির উপর। তাকেই খুনের চেষ্টা করে সে। যদিও শেষ পর্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় বাড়ির লোকেরা ওই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। পুরো ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। এর আগেও শহরে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র হিংসার কারণেই একটি ছোট শিশুকে জলে চুবিয়ে খুন করেছিল তারই এক আত্মীয়া। তাই এই ঘটনাটিকেও পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পিঙ্কি বিবি নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের এক বাসিন্দা অভিযোগ জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি তিনি তাঁর মাকে দেখতে পঞ্চসায়রে আসেন। এই বাড়িতেই থাকেন তাঁদেরই পরিজন বেবি শেখের দুই ছেলে। দুই ছেলেরই বিয়ে হয়েছে। শহিদ স্মৃতি কলোনিতে দুই ছেলেই একসঙ্গে থাকেন। কয়েক মাস আগে ছোট ছেলের বিয়ে হয়। সেই ছোট ছেলের স্ত্রীর আসল বাড়ি ক্যানিংয়ে। ১৬ বছরের সেই কিশোরীটিই অভিযুক্ত। গত মাসেই ওই কিশোরীর বড় জা-এর একটি পুত্রসন্তান হয়। তার নাম দেওয়া হয় সলমন শেখ। ২৫ দিনের শিশুটি তার নিজের ঘরেই শুয়ে ছিল। তাকে একা রেখে তার মা ও বাড়ির অন্যরা কাজ করছিলেন। ঘর ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে ওই নাবালিকা কিশোরী শিশুটির কাছে যায়। তার মুখে একটি বালিশ চেপে ধরে। তার ছক ছিল, খুনের পর বালিশটি সরিয়ে নেওয়া। বাড়ির অন্যারা মনে করবেন, অসুস্থ হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। কিন্তু সময়মতোই ঘরে চলে আসেন পিঙ্কি ও বেবি। তাঁরা ঘটনাটি দেখেই চিৎকার করে ওঠেন। বালিশটি ফেলে পালানোর চেষ্টা করে ওই বধূটি। শিশুটি অসুস্থ বোধ করতে থাকে। একজন গিয়ে তাকে কোলে তুলে নেয়। চিৎকার শুনে বাড়ি ও এলাকার আরও কয়েকজন বেরিয়ে আসেন। তাঁরা ওই মেয়েটিকে মারধর করেন। বার বার জিজ্ঞাসা করেন, কেন সে এই কাজ করেছে। যদিও মেয়েটি নিরুত্তর। পঞ্চসায়র থানায় খবর যায়। পুলিশ এসে ওই বালিকা বধূকে আটক করে নিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.