ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: গায়ে হলুদ রঙের আঁটসাঁট জামা। পরনে লাল প্যান্ট। বাঁ পায়ে দড়ি বাঁধা। ডান পায়ে বেল্ট। কোমরে চেন। ঠিক এভাবেই সলিলসমাধি হয়েছিল জাদুকর চঞ্চল লাহিড়ীর। সোমবার সন্ধে নাগাদ রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ। কীভাবে হল চঞ্চলের মৃত্যু? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুডিনি চ্যালেঞ্জে গা ভাসাতে গিয়েই ঘটে এই বিপদ।
[আরও পড়ুন: নবান্নে বৈঠকের পরই চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সক্রিয় লালবাজার]
হাত-পা বেঁধে বাক্সবন্দি করে জলে ফেলে দেওয়া এবং জল থেকে জীবিত উঠে আসার মতো জাদুর খেলা ‘হুডিনি অ্যাক্ট’ নামে পরিচিত। মার্কিন জাদুকর হ্যারি হুডিনি প্রথম এই খেলা দেখিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। কথিত রয়েছে, রেকর্ড গড়ে হুডিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন আগামী ১০০ বছরে আর কেউ এই খেলা দেখাতে সফল হবেন না। সে সময় ভারতীয় জাদুরও বিশ্বজোড়া কদর। শোনা যায়, এর পর থেকেই ভারতীয় জাদুবিদ্যাকে ছোট করে দেখাতে শুরু করেন হুডিনি। ভারতকে অসম্মান করার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, তাঁর রেকর্ড ভাঙতে গিয়ে মৃত্যু হয় একাধিক জাদুকরের। শেষে হুডিনিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রথম তাঁর রেকর্ড ভাঙেন জুনিয়র পিসি সরকার অর্থাৎ প্রদীপকুমার সরকার। বিশিষ্ট জাদুকর প্রতুলকুমার সরকারের ছেলে। আর তা ভাঙেন ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার অনেক আগেই। হুডিনি এই খেলা দেখিয়েছিলেন আগের শতকের দ্বিতীয় দশকে। জুনিয়র পিসি সরকার সেই রেকর্ড ভাঙেন ৬০ বছরের মধ্যে। তারপরও বহু চেষ্টা হয়েছে। কেউ সফল হয়েছেন। কেউ ব্যর্থ। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দেখে নেওয়া যাক তেমনই কয়েকটি ঘটনা।
গত শতকের তিনের দশকে খবর পাওয়া যায় প্রায় একই ধরনের খেলা দেখাতে গিয়ে মৃত্যু হয় গিলবার্ট জেনেস্টারের। হুডিনি তখন তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। এক মানুষ সমান একটি দুধের বড় ক্যানে জল ভরে তাতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ডোবানো হয় গিলবার্টকে। কিন্তু ওই মুখবন্ধ ক্যানটি পড়ে গিয়ে ঝাঁকুনির জেরে তার থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তাটি খারাপ হয়ে যায়। অথচ বাইরে থেকে তা বোঝা যায়নি। গিলবার্ট তাতে প্রবেশ করার পর আর জীবিত বেরিয়ে আসতে পারেননি। অনেক পরে ১৯৮৪ সাল। জেফ রেবার্ন হুপার নামে ইন্ডিয়ানার এক জাদুকর এমন খেলা দেখানোর চেষ্টা করেন। সেখানকার এক বিরাট লেকে তিনি খেলা দেখাতে চেয়েছিলেন। দুর্ঘটনা ঘটেছিল রিহার্সালের সময়। হাতে হাতকড়া পরে লেকের জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন জেফ। ১০০ মিটারের মতো সাঁতরে গিয়ে বাঁধন খুলে ফেলেন। কিন্তু সেখান থেকে আর পালটা সাঁতরে ফিরে আসতে পারেননি। জানা যায়, প্রবল হাওয়ায় জলের স্রোতের টানে সাঁতরে উঠতে পারেননি তিনি। সাহায্যের জন্য চেঁচিয়েওছিলেন। কিন্তু তাঁর আওয়াজ কারও কানে পৌঁছয়নি প্রবল হাওয়ার চোটেই।
[আরও পড়ুন: ইতিহাসের অপমৃত্যু, হাওড়া স্টেশনে পুড়ে ছাই ব্রিটিশ আমলের সেলুন কার]
এমন ঘটনা আরও একাধিকবার ঘটেছে। তার মধ্যে অনেকগুলি নথিবদ্ধ হয়েছে। কোনওটা হয়নি। এই তালিকাতেই সাম্প্রতিকতম ঘটনা হল এই বাংলার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের চঞ্চল লাহিড়ীর। রবিবার হাওড়া ব্রিজ থেকে তাঁকে হাত-পা বেঁধে গঙ্গায় নামিয়ে দেওয়া হয়। নামার পর কিছু দূর গিয়েই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। সমস্ত বাঁধন ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসতে তিনি পেরেছিলেন। কিন্তু সাঁতরে উঠে আসতে পারেননি। সোমবার বিকেলে হাওড়া ঘাটে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.