সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় এবার পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করল রিষড়া বিধান কলেজের অভিযুক্ত জিএস শাহিদ হাসান খান। শুক্রবার শ্রীরামপুর থানায় আত্মসমর্পণ করে ওই ছাত্রনেতা।
[ অভিযুক্তর শাস্তির দাবিতে মমতার দ্বারস্থ রিষড়ার আক্রান্ত ছাত্রী ]
শাহিদের বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ আনে কলেজেরই এক ছাত্রী। ঘটনার যে সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে, তাতেই দেখা যায়, টিএমসিপি নেতা সমানে কিল-চড়-ঘুষি মারছে ওই ছাত্রীকে। প্রভাবশালীর পুত্র বলেই অভিযুক্তকে আড়াল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। সিসিটিভি ফুটেজ সম্প্রচারিত হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পরে অবশ্য অভিযোগ দায়ের করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছিলেন, এই ধরনের কোনও ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি হবে। একই মত ছিল জয়া দত্তেরও। তিনিও এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। শুক্রবারই অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন নিগৃহীতা ছাত্রী।
[ ছাত্রীকে মারধরে অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ শিক্ষামন্ত্রীর ]
এদিন সকালে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান আক্রান্ত ছাত্রী ও তাঁর পরিবার। বলেন, ‘দিদিকে বলব এই ঘটনায় অভিযুক্তদের যেন কড়া শাস্তি হয়।’ ছাত্রীর পরিবারের আশঙ্কা, অভিযুক্ত ছাত্রনেতা ও তার বাবা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ নষ্ট বা বিকৃত করতে পারে। পুলিশ ও প্রশাসনের সক্রিয়তা বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ছাত্রীর পরিবার আবেদনও জানায়। শাহিদের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন ওই ছাত্রী। তাই নিজের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও দাবি জানান তিনি। এরপরই দ্রুত ঘটনা মোড় নয়। প্রায় মাসাধিক পুরনো ঘটনার জেরে শুক্রবার শ্রীরামপুর থানায় আত্মসমপর্পণ করে ওই যুবক। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে চলেছে পুলিশ। মারধর, শ্লীলতাহানি ও হুমকি দেওয়ার কারণে অভিযুক্ত ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হবে।
[ ঋণদানকারী সংস্থার নম্বর দিয়ে বিল মেটানোর চাপ, ফের বিতর্কে আমরি ]
ঠিক কী হয়েছিল ৪ ডিসেম্বর?
বিধান কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীটি নিজেও টিএমসিপি করেন। তাঁর অভিযোগ, জিএস শাহিদ হাসান খান হামেশাই তাঁকে কুপ্রস্তাব দিত। সাড়া না দেওয়ায় সে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ৪ তারিখ কমনরুমে সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ হয়েছে। ছাত্রীটির দাবি, সেদিন শাহিদ নিজের বিশ্বস্ত কয়েকজন বাদে অন্যদের ঘর থেকে বের করে দিয়ে তাঁর মুখোমুখি হয়। “প্রথমে ও আমার মোবাইল দেখতে চাইল। আমি দিইনি। ও আরও রেগে যায়।” – বলেন তিনি। মেয়েটির অভিযোগ, এরপরই শাহিদ তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ শুরু করে, গালে সজোরে চড় মারে। হেলমেট ও ব্যাগ ছুড়ে মারে তাঁর দিকে। এমনকী, টেবিলের উপর পাতা কাচ তুলে মারতে যায়। সম্মানহানির চেষ্টাও করে। তিনি যখন নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত, তখন ঘাড়ে ধাক্কা দিতে দিতে পেটে লাথি মেরে ঘরের বাইরে বের করে দেয়। তরুণীর আক্ষেপ, তাঁকে এভাবে হেনস্তা হতে দেখেও গোড়ায় কেউ এগিয়ে আসেনি। শেষমেশ পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে দেখে শাহিদের দু’একজন সাঙ্গোপাঙ্গ তাকে আটকায়। নিগৃহীতার কথায়, “তারপরেও ও অবশ্য বেশ ক’বার আমার পেটে লাথি মেরেছে।” এখানেই শেষ নয়। আক্রান্ত ছাত্রীর দাবি, মারধরের পর শাহিদরা তাঁকে হুমকি দিয়ে বলে, ঘটনা বাইরে ফাঁস হলে ফল মারাত্মক হবে।
এতদিন এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছিল বলেই অভিযোগ। যদিও শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতেই ঘটনার দিকবদল হল।
দেখুন ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.