প্রতীকী ছবি
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্রে প্রার্থী দিল হিন্দু মহাসভা। রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক এই কেন্দ্র থেকে এবার ভোটে লড়তে চলেছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ড. চন্দ্রচূড় গোস্বামী। এই কেন্দ্রে জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী। এমনকী তাঁর নেতৃত্বেই দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছর পর দলগতভাবে হিন্দু মহাসভা ২৪-এর নির্বাচনে বাংলা তথা ভারতবর্ষের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নির্বাচনে লড়াই করতে চলেছে।
সংগঠনের রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে অফিস সেক্রেটারি শ্রাবণী মুখার্জী, অ্যাডভোকেট পীযুষ কান্তি সরকার, অ্যাডভোকেট দীপ্তিশ গুহ, শম্পা ঘোষ, অভিজিৎ দাস, রিয়া মন্ডল, জিতেন গোস্বামী, বিদ্যুতপর্ণা দাস, ড. কিংশুক গোস্বামী, সায়ন্তি ভট্টাচার্য্যরা সম্মিলিতভাবে যাদবপুর কেন্দ্রের জন্য রাজ্য সভাপতি ড. চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নাম মনোনীত করেন। এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হওয়ার পরই চন্দ্রচূড়বাবু একযোগে তোপ দাগেন তৃণমূল, সিপিএম ও বিজেপিকে।
নাম না করেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সায়নী ঘোষকে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, “যাদবপুর কেন্দ্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাতে জনৈক নেত্রী শিব ঠাকুরের প্রতি যে কুরুচিকর কথা বলেছেন তাতে হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। হাতের তীর আর মুখের কথা একবার ছুঁড়ে দিলে আর ফেরত নেওয়া যায় না। ওনার নিজের দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এবং ওনার দলের ভোটাররাও নিশ্চই ওনার কদর্য মন্তব্যকে সমর্থন করেন না।”
যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্য়ায়ের দিকে আঙুল তুলে চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন, “আরেকটি দলে প্রার্থী হয়েছেন জনৈক পলাতক গাঙ্গুলী যিনি শেষ বিধানসভা নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে ভোটের ফল বেরোনোর আগেই নিজের পার্টি কর্মীদের নির্বাচনী হিংসায় বিপদের মধ্যে ফেলে বোধ হয় উসেইন বোল্টের চেয়েও দ্রুত গতিতে দিল্লি পালিয়ে গিয়েছিলেন। এহেন পরিযায়ী পাখিরা বসন্তের কোকিল সেজে আসে তার পর ভোটে হেরে আবার দিল্লীতে নিজের আখের গোছাতে ফিরে যায় । এই ধরনের প্রার্থী চয়ন করার ফলে এমনিতেই কর্মী সমর্থকদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।”
বিজেপি ও তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএমকেও একহাত নেন হিন্দু মহাসভার প্রার্থী চন্দ্রচূড় গোস্বামী। সিপিএমকে ‘লাল সন্ত্রাস’ তথা ‘গণহত্যার কারিগর’ আখ্য়া দিয়ে, তিনি বলেন, “সবাই জানে নেতাই, নন্দীগ্রাম, ধানতলা, বানতলার কারিগর কারা।” আনন্দমার্গী গণহত্যা থেকে সাঁইবাড়ি প্রসঙ্গ টেনে চন্দ্রচূড় বলেন, “যাদবপুরে অনেক সংস্কৃতিবান মানুষের বাস হলেও লাল সন্ত্রাসীরা বরাবরই একটি সুস্থ ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী আর সেই জন্যই এরা নেতাজিকে তোজোর কুকুর, রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি, রামকৃষ্ণ ঠাকুরকে মৃগীরুগী বা বিবেকানন্দকে বেকার যুবক ইত্যাদি বলার মত পাপ করে রেখেছে । এরা শ্রেণি সংগ্রামের নামে মানুষে মানুষে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিষাক্ত বৃক্ষের বীজ রোপণ করে।”
বর্তমান প্রেক্রাপটে যাদবপুরের ভোটাররা হিন্দু মহাসভাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন বলেই চন্দ্রচূড়বাবুর বিশ্বাস। ইতিমধ্যেই প্রচারের জন্য পায়ে হেঁটে প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাওয়ার জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেছেন হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি। তবে ঐতিহ্য থাকলেও লোকসভার মত এত বড় নির্বাচনে ভোটের খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই এই সংগঠনের। তাই ভোটের খরচ বহন করতে চন্দ্রচূড়বাবু কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাধুকরীর পাশাপাশি চা এবং সরবত বিক্রি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। এনিয়ে তাঁর বক্তব্য দেশের স্বার্থে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যদি হাত পেতে বলতে পারেন “Give me blood and I will give you Freedom” তাহলে নেতাজির একজন ক্ষুদ্র অনুগামী হয়ে দেশের জন্য সরবত বা চা বিক্রি তো অবশ্যই, এমনকী লোকের জুতো পালিশ করতেও লজ্জা নেই তাঁর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.