সুদীপ রায়চৌধুরী: আগামী এক বছরের মধ্যে আমূল পাল্টে যাচ্ছে বাংলার মাছ বাজারের ছবি৷ মৎস্যকর্তাদের এহেন দাবির পিছনে রয়েছে হায়দরাবাদের জাতীয় মৎস্য উন্নয়ন নিগম থেকে সম্প্রতি আসা একটি চিঠি৷ যাতে বলা হয়েছে, হেনরি আইল্যান্ডে দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে থাকা ফিশ সিড ব্রিডিং হ্যাচারিটির সংস্কার ও আধুনিকীকরণে যাবতীয় আর্থিক সাহায্য করবে তারা৷ এই কাজের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা দিচ্ছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা৷ ধাপে ধাপে আসবে আরও টাকা৷
কিন্তু একটা মাত্র হ্যাচারি দিয়ে আমূল পাল্টে দেওয়া যাবে বাংলার মাছবাজারকে? উত্তরে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এমডি সৌম্যজিৎ দাস বলেন, রাজ্যে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন দফতরের আধিকারিক ও মৎস্য বিজ্ঞানীরা৷ সেখানে কোবিয়া ও সিলভার প্যামপিনো নামে দু’টি নতুন প্রজাতির মাছের নাম ওঠে৷ এর মধ্যে কোবিয়া নিয়ে প্রবল উৎসাহিত হয়ে ওঠেন মৎস্যকর্তারা৷ দক্ষিণ চিন উপসাগরের এই মাছের আকৃতির সঙ্গে তিমি মাছের বেশ মিল৷ আর বৃদ্ধির হার রীতিমতো চমকদার৷ ১০০ গ্রাম ওজনের একটি কোবিয়া চারা মাত্র তিন মাসে পাঁচ কেজি ওজনের কাছাকাছি পৌঁছে যায়৷ সেই কারণে এই মাছ চাষ অতি লাভজনক৷ আন্তর্জাতিক বাজারেও এই মাছের প্রচুর চাহিদা৷
জানা গিয়েছে সম্প্রতি তামিলনাড়ুতে এই মাছের চাষ শুরু হয়েছে বেসরকারিভাবে৷ এর পরই গতবছর পরীক্ষামূলকভাবে কোবিয়া চাষের সিদ্ধান্ত নেয় নিগম৷ চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি সংস্থা থেকে চারা কিনে এনে ছাড়া হয় আলমপুরে নিজস্ব জলাশয়ে৷ একই সঙ্গে ছাড়া হয় সিলভার প্যামপিনো চারাও৷ মাছ বড় হলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়৷ নমুনা দেখে সংস্থাগুলি রীতিমতো উৎসাহী হয়ে ওঠে বলে দাবি নিগম এমডি-র৷ তখনই রাজ্যে বাণিজ্যিকভাবে কোবিয়া ও সিলভার প্যামপিনোর চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷
কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা এই দুই মাছের চারার আকাশছোঁয়া দাম৷ সৌম্যজিৎবাবু জানান, গতবছর চেন্নাই থেকে প্রতিটি কোবিয়া মাছের চারা কিনতে হয়েছিল ১৬০ টাকা করে৷ প্যামপিনোর চারার দাম পড়েছিল প্রতিটি ১০০ টাকা৷ বিপুল এই দামে চারা কিনে এনে নিজেদের জলাশয়ে চাষ করে লাভের মুখ দেখা অবাস্তব৷ তাই বাংলাতেই ডিম ফুটিয়ে কোবিয়া ও সিলভার প্যামপিনোর চারা তৈরির ভাবনার সূত্রপাত৷ আর সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে নিগমকর্তাদের নজর পড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেনরি আইল্যান্ডে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকা নিজস্ব ফিশ সিড ব্রিডিং ফার্মের দিকে৷
হেনরি আইল্যান্ডে ফিশ সিড ব্রিডিং ফার্মটি তৈরি হয়েছিল বাম আমলে৷ রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী তখন কিরণময় নন্দ৷ মৎস্য দফতরের এক আধিকারিকের অভিযোগ, জন্মের পর থেকেই হ্যাচারি মুখ থুবড়ে পড়েছিল৷ কারণ সেই জমানার সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই প্রবল ক্ষমতাশালী এক মহিলা উপ অধিকর্তার কথামতো এটি তৈরি করা হয়েছিল৷ ফলে ক’দিন পরই পরিত্যক্ত হয়ে যায়৷
রাজ্যে কোবিয়া ও সিলভার প্যামপিনো চারা তৈরির কথা মাথায় আসার পর সেই পরিত্যক্ত হ্যাচারি কর্মক্ষম করে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় নিগম৷ হ্যাচারি সংস্কারে অনুদান চেয়ে হায়দরাবাদের কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে দরবার করা হয়৷ টানা এক বছর হাঁটাহাঁটি, চিঠিচাপাটি, ফোনাফুনির পর হায়দরাবাদে গিয়ে টানা বেশ কিছুদিন পড়েও থাকেন নিগমের জেনারেল ম্যানেজার বি কে মণ্ডল নিজেই৷ এর ফলও মেলে৷ সপ্তাহ দুই আগে হায়দরাবাদ থেকে অনুদানের সম্মতির চিঠি এসে যায় বিকাশ ভবনে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের দফতরে৷
সৌম্যজিত্বাবু জানাচ্ছেন, “আশা করছি পুজোর আগেই অনুদানের টাকা হাতে এসে যাবে৷ আর তার পরই শুরু হবে হ্যাচারি সংস্কারের কাজ৷ সেক্ষেত্রে আগামী বছর বাজারে চলে আসবে এই দুই প্রজাতির মাছ৷”
কিন্তু তাতে কী ভাবে পাল্টাবে বাংলার মাছবাজারের ছবি? নিগম কর্তার ব্যাখ্যা, “কোবিয়া অতি দ্রুত বেড়ে ওঠে৷ চারা থেকে তিনমাসে পাঁচ কেজি ওজনে পৌঁছে যায়৷ সিলভার প্যামপিনোর ‘গ্রোথ রেট’-ও খুব ভাল৷ সময় কম লাগায় চাষে মৎস্যজীবীদের খরচ কম৷ স্বাভাবিকভাবে দামও থাকবে আয়ত্তের মধ্যে৷ দু’টি মাছই খেতে অতীব স্বাদু৷ ফলে এই দুইয়ের দৌলতে বাংলার মাছবাজারে কম দামে সুস্বাদু মাছের জোগান বাড়বে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.