গৌতম ব্রহ্ম: ছ’দিন পরেই শুরু হয়ে গিয়েছিল লকডাউন। ভাগ্যিস পাটনার সেই কিশোরের পরিবার রাজি হয়েছিল অঙ্গদানে। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও তাই কলকাতা সাক্ষী রইল হার্ট প্রতিস্থাপনের। পঁয়তাল্লিশের শরীরে বসল সতেরোর হার্ট।
অমিত কুমার দে। নদিয়ার দেবগ্রামে বাড়ি। বছরের প্রথম দিনেই ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। প্রাণে বাঁচলেও হার্টের পেশীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘ইসকেমিক কার্ডিও মায়োপ্যাথি’র শিকার হন অমিতবাবু। কল্যাণীর একটি হাসপাতালে দিন দশেক চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারপর আসেন কলকাতার মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে। কার্ডিও থোরাসিক সার্জন ডা. কুণাল সরকারের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কুণালবাবু বুঝতে পারেন, বাইপাস বা অন্য কিছু করে অমিতবাবুকে সুস্থ করা যাবে না। একমাত্র পথ হার্ট ট্রন্সপ্লান্টেশন। কুণালবাবুই ‘রিজিওনাল অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেশন’ (রোটো)-এ অমিতবাবুর নাম নথিভুক্ত করেন। অনুরোধ করেন, যাতে তাড়াতাড়ি একজন দাতার ব্যবস্থা করা যায়। কুণালবাবু জানালেন, অমিতবাবুর নাম নথিভুক্তকরণের পর কলকাতায় বেশ কয়েকটি ব্রেন ডেথের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু ম্যাচিং না হওয়ায় ফলপ্রসূ হয়নি। অবশেষে শাপমুক্তি।
১৭ মার্চ রাতে রোটো মেডিকাকে জানায় যে, পাটনার ‘ইন্দিরা গান্ধী মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট অফ পাটনা’য় পথ দুর্ঘটনায় জখম এক কিশোরের ব্রেন ডেথ হয়েছে। কিশোরের পরিবার অঙ্গদানে রাজি হয়েছে। ১৮ মার্চ ভোরবেলা মেডিকার ন’সদস্যের একটি দল পাটনার সেই হাসপাতালে যান। ক্যাসকেড বক্সে করে হার্ট আনা হয় কলকাতায়। কুণালবাবু জানালেন, দুপুর একটা নাগাদ ‘হারভেস্টিং শুরু হয়। দেড়টা নাগাদ পাটনা বিমানবন্দরে পৌঁছয় হার্টের বাক্স। বিকেল তিনটে নাগাদ মেডিকাতে শুরু হয় প্রতিস্থাপনের কাজ। মানে দু’ঘণ্টারও কম সময়ে পাটনা থেকে কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে সফল হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয়। কুণালবাবুকে যোগ্য সঙ্গত করেন ডা. অর্পণ চক্রবর্তী, ডা. দীপাঞ্জন চট্টোপাধায়, ডা. সান্দিপ সারদার, ডা. সৌম্যজিত ঘোষ প্রমুখ।
অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন অমিতবাবু। সোমবার তিনি জানান, কুণালবাবুদের জন্যই নতুন জীবন পেলাম। ‘ছুটি’ হয়ে গেলেও করোনা আর লকডাউন পরিস্থিতির জন্যে অমিতবাবুকে এতদিন ছুটি দেওয়া যায়নি। কুণালবাবু জানিয়েছেন, কিন্তু হাসপাতালে বেশিদিন এই রোগী রাখাও ঝুঁকির। তাই আমাদের চিকিৎসকদের একটি দল পুলিশের সঙ্গে কথা বলে ওঁকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। ইতিমধ্যে অবশ্য মেডিকার ডাক্তারবাবুরা অমিতবাবুর দেবগ্রামের বাড়ির পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করেছেন। কথা বলেছেন স্থানীয় একটি হাসপাতাল ও ডাক্তারবাবুর সঙ্গে। দেওয়া হয়েছে তিনমাসের ওষুধও। কুণালবাবু জানিয়েছেন, “এটা মেডিকার প্রথম হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট। রোগীর আথির্ক অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমরা এই প্রতিস্থাপনের জন্য এক টাকাও নিইনি। পুরোটাই নিজেরা ব্যবস্থা করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.