অভিরূপ দাস: ইছাপুরের বাসিন্দা বছর আঠারোর তরতাজা যুবকের মৃত্যুতে প্রকাশ্যে এল বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের খামতি। সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ হওয়ার আগে ওই নার্সিংহোমকে ৫ লক্ষ টাকা জমা রাখার নির্দেশ দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কমিশনের নির্দেশে খানিকটা হলেও স্বস্তিতে মৃত যুবকের পরিবার।
গত ১১ জুলাই। শহর কলকাতা সাক্ষী থেকেছিল এক নির্মম ঘটনার। শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছিলেন বছর আঠেরোর শুভ্রজিৎ। চিকিৎসা পাননি। কামারহাটি ESI হাসপাতাল থেকে শুভ্রজিৎকে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে রেফার করা হয়েছিল। অভিযোগ, দু’মিনিটের মধ্যে র্যাপিড টেস্ট করে শুভ্রজিৎকে করোনা পজিটিভ (Coronavirus) ঘোষণা করেছিল মিডল্যান্ড। ওইটুকুই। অভিযোগ, প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও দেওয়া হয়নি। ১১ ঘণ্টা চরম কষ্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তরুণ। সূত্রের খবর, যে সময় র্যাপিড টেস্ট করে শুভ্রজিৎকে করোনা পজিটিভ ঘোষণা করে মিডল্যান্ড, সেসময় আদৌ তাদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করার ছাড়পত্রই ছিল না।
ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে “ইএসআই হাসপাতালের সঙ্গে গাঁটছড়া থাকা সত্ত্বেও কেন চিকিৎসা মিলল না?” এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছে কমিশনকে। উত্তর খুঁজতে স্বাস্থ্য কমিশন কথা বলে মিডল্যান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, “কোভিড চিকিৎসার হাসপাতাল এটা নয়। তাই শুভ্রজিৎকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” এমন দায়সারা উত্তরে খুশি নয় স্বাস্থ্য কমিশন। তাদের পালটা প্রশ্ন, বছর আঠারোর তরতাজা এক যুবক, শ্বাসকষ্টে অচৈতন্যপ্রায়। তাঁর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার প্রয়োজন জেনেও কীভাবে তাকে ফিরিয়ে দিল হাসপাতাল? অবিলম্বে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে।
কমিশন চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই নার্সিংহোমের উচিৎ ছিল রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দেওয়া। এই তদন্ত যতদিন না নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততদিন ৫ লক্ষ টাকা জমা রাখতে বলা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মিডল্যান্ড কর্তৃপক্ষকে। প্রসঙ্গত, শুভ্রজিতের মৃত্যুর পর বেলঘরিয়া থানায় এফআইআর দায়ের করেছিলেন তাঁর মা শ্রাবণীদেবী। এদিন স্বাস্থ্য কমিশনের নির্দেশ শুনে সন্তানহারা মা জানিয়েছেন, ”কোনওরকম লাইফ সাপোর্ট না দিয়ে আমার ছেলেটাকে ওরা মেরে দিল। সঠিক বিচার হলে আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।” উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করে শুভ্রজিৎ। কিন্তু সেই রেজাল্ট তার আর দেখে যাওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, এদিন আরও একটি বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নয়, অত্যধিক বিলও নেওয়া হয়নি। রোগীকে অকারণে বসিয়ে রাখা হয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। কারণ জানতে চাইলে জুটেছিল দুর্ব্যবহার। নালিশ যেমন অভিনব, রায়ও তেমন নজিরবিহীন। এলগিন রোডের এক্স রে ক্লিনিককে রাজ্য স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন লিখিতভাবে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিল। এ ধরনের পদক্ষেপ এই প্রথম বলে জানা গিয়েছে কমিশন সূত্রে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.