:
অভিরূপ দাস: হাজারও নির্দেশিকা, নিষেধাজ্ঞা, কড়া পদক্ষেপ সত্ত্বেও চিকিৎসা বাবদ মোটা অঙ্কের বিল তৈরির প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলি। সেই একই অভিযোগে এবার কাঠগড়ায় বাইপাসের ধারে নামী এক বেসরকারি হাসপাতাল। করোনা (Coronavirus) রোগীর মৃত্যুর পরও প্রায় চার লক্ষ টাকা বিল ধরাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, এই অভিযোগে রোগীর পরিবার স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়। কমিশন কড়া পদক্ষেপ নিয়ে জানিয়ে দেয়, এত টাকা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। শুধুমাত্র চিকিৎসা খরচ বাবদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পরিবারকে দিতে হবে, তাও আবার একসঙ্গে নয়, মাসিক কিস্তিতে।
জানা গিয়েছে, গত ১২ জুলাই রতন কুমার মজুমদার নামে জনৈক ব্যক্তির বৃদ্ধা শাশুড়ি করোনা আক্রান্ত হয়ে ভরতি হন বাইপাসের ধারে ওই নামী হাসপাতালে। ভরতির সময়ে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা অ্যাডভান্স হিসেবে চাওয়া হয় হাসপাতালের তরফে। কোনওক্রমে সেই টাকা জোগাড় করে ভরতি করানো হয়। বৃদ্ধার আর্থিক পরিস্থিতি তেমন সচ্ছল নয়। তাই বেশ কষ্ট করে সেই টাকা জোগাড় করা হয়। এরপর ১৪ দিন তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রতনবাবু জানান, এই কদিনের সমস্ত ওষুধ হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে কিনে দেওয়া হয় এবং তা নগদেই কেনা হয়। কোথাও কোনও টাকা বাকি রাখা হয়নি ওষুধ বাবদ।
সপ্তাহ দুই পর করোনা আক্রান্ত ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয় হাসপাতালে। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকার বিল ধরায় রতনবাবুকে। বলা হয়, এই টাকা হাসপাতালের প্রাপ্য, যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে দেওয়া হোক। রতনবাবুর অভিযোগ, এত টাকা মেটানোর চাপ রীতিমতো হুমকি ফোন আসতে থাকে তাঁর কাছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হন। গত শুক্রবার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের তরফে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেকে পাঠানো হলেও তারা গরহাজির ছিলেন। এরপর আজ ফের স্বাস্থ্য কমিশনের তলব পেয়ে তাঁদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন। রতনবাবুর মুখোমুখি বসিয়ে, কথা বলে নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে এর সমাধান করেন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।
কমিশনের নির্দেশ, এত টাকা নয়, মাত্র ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা হাসপাতাল খরচ দিতে হবে রতনবাবুকে। এই বিল মেটানোর জন্য প্রায় ২ বছর সময় পাবেন তিনি। মাসে মাসে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিলেই হবে। রোগীর মৃত্যুর পরও এত মোটা অঙ্কের বিল তৈরি করায় কমিশনের ভর্ৎসনার মুখে পড়ে বাইপাসের ধারের ওই নামী বেসরকারি হাসপাতাল।
অন্যদিকে, এদিন স্বাস্থ্য কমিশন আরও একটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে। গত ৩ জুলাই এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা অসুস্থ হয়ে বেহালার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি হন। সেখানে তাঁকে আয়রন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, তারপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অন্তঃসত্ত্বা তরুণী। এদিন সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বসে কমিশনের তরফে হাসপাতালে সেসময় কর্মরত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বিশেষজ্ঞ এবং যিনি ইঞ্জেকশন দিয়েছেন, তাঁদের সকলের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.